সন্ধি
সন্ধি. ১
চরিত্রঃ বাদল, রূপকথা
স'ানঃ সড়ক
সময়ঃ দুপুর
বয়সঃ বাদল ৩৩, রূপকথা ৯
[শো রুম থেকে সাদা রঙের টয়োটা চালিয়ে সড়কের বামপাশে থামলো বাদল। পরিচিত কাউকে খোঁজার ভঙ্গি করে এদিক ওদিন তাকালো দু’বার। গাড়ি থেকে নেমে সামনে পেছনে হাঁটলো কয়েক পা। ফিরে এসে গাড়িতে বসে লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখলো। গাড়ি স্টার্ট করে সিগারেট বের করে একটা জ্বালালো। প্যাকেট পকেটে ভরে চলতে শুরু করলো। সড়ক প্রায় ফাঁকা। মিনিট খানেক যাবার পর ব্রেক করলো। লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখলো। মন খারাপ। সিগারেটের প্যাকেট পকেট থেকে বের করে বাম সিটে রাখলো। রাস-ার ডানপাশে ফুলবিক্রেতা একটা মেয়েকে দেখে হাত বাড়িয়ে ডাকলো। হাতে জ্বলা সিগারেট চোখে পড়লে সিগারেট ফেলে দিয়ে আবারো ডাকলো। মেয়েটি যত দ্রুত সম্ভব গাড়ির কাছে এসে বাদলের দিকে তাকালো।]
বাদলঃ অনিতাকে দেবার মতো ফুল আছে তোমার কাছে?
[মেয়েটি না সূচক মাথা নাড়লো।]
বাদলঃ তুমি ফুল বিক্রি করো না?
[মেয়েটি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।]
বাদলঃ তুমি কথা বলতে পারো না?
[মেয়েটি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।]
বাদলঃ তাহলে কথা বলছো না কেন?
রূপকথাঃ ইচ্ছে করে না।
[ বাদল চমকে তাকালো। একটা একশো টাকার নোট বাড়িয়ে দিলে মেয়েটি নিয়ে প্রায় অর্ধেকটা
ফুল বাদলকে দিলো।]
বাদলঃ দুপুরে খেয়েছো?
[মেয়েটি না সূচক মাথা নাড়লো।]
বাদলঃ আমিও খাইনি। আমার সাথে
খাবে? খেতে চাইলে গাড়িতে বসো। আজই গাড়ি কিনেছি। দামী হোটেলে খাবো চলো।
রূপকথাঃ তাহলে সোমবারে।
বাদলঃ তোমার নাম কি?
রূপকথাঃ রূপকথা।
বাদলঃ রূপকথা, আমাকে আর পাবে না তুমি।
[ বাদল দ্রুত গাড়ি চালালো। মুহূর্ত্বেই সাদা টয়োটা মিশে গেল অন্য গাড়িগুলোর ভীরে।]
........................................................................................
চরিত্রঃ অনিতা, শ্যামল
স'ানঃ বেলকনি
সময়ঃ রাত
বয়সঃ অনিতা ১৭, শ্যামল ২৫
[এক কাপ চা নিয়ে বেলকনিতে রাখা চেয়ারে আরাম করে বসলো অনিতা। অপর হাতে পাক্ষিক বিনোদন পত্রিকা। চা'তে চুমুক দিতে দিতে বিনোদনের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে অনিতা। পাঠকের লেখা বিভাগ মেসেজ বোর্ড-এ এসে মনোযোগ সহকারে দেখছে। তারপর একটি কবিতা পড়া শুরু করলো।]
অনিতাঃ [আবৃতি]
একদিন সুবিল সরোবরে দেখা তোমার সাথে
জাগতিক একজন মানুষের সাথে
একদিন দেখা অজাগতিকের
একদিন জ্যোৎস্না কাটা শরতের বাঁকে
একদিন আবির কেনা মধ্য সাঁঝে
একদিন দেখা তোমার সাথে
একদিন দেখা পৌঁষের রাতে
একদিন নিঃশ্বাসে তোমার পত্র ছিল
একদিন বিশ্বাসে তোমার উপসি'তি
সবছেড়ে একদিন জাগতিকের সাথে
শব্দহীন বসেছিলাম উষ্ণ কলেবরে
একদিন আকাশে জ্যোৎস্নার মেলা বসেছিল
সময়ের অর্জণ নিঃশব্দ হেসেছিল
একদিন নৃত্যাবাসে তবু ঘুম আসেনি
একদিন তবু কভু ভ্রম আসেনি
পবিত্র মানবীর বন্ধনে স্পর্শ হলো একদিন
একদিন রাষ্ট্র হলো শতকের যিশুর জন্মসূত্র
একদিন এইসব ইতিহাস হলো
উনিশ একাত্তর কিংবা ঘুম থেকে
জেগে ওঠা ভোরের মতো
চন্দর সূর্যের দেখা তারপর হয়নি
শতবর্ষ পরে একদিন জানা গেল
[পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আবারো প্রচ্ছদে পত্রিকার নাম দেখলো অনিতা। পাক্ষিক বিনোদন। আবার ফিরে গেল কবিতায়। কবিতার নিচে লেখকের নাম- শ্যামল সরকার, পার্ক রোড, বগুড়া। নামের নিচে সেলফোন নাম্বার। অনিতা রুম থেকে সেলফোন এনে নাম্বার টিপলো। অপর পাশে ফোন বাজছে।]
অনিতাঃ শ্যামল বলছেন?
শ্যামলঃ হ্যাঁ।
অনিতাঃ একটু কথা বলতে পারি?
শ্যামলঃ বলে যান।
অনিতাঃ চন্দর সূর্যের আর দেখা হয়না কেন?
শ্যামলঃ কি নাম আপনার?
অনিতাঃ সাবরিনা। সাবা বলে
ডাকে কেউ কেউ।
শ্যামলঃ কোথায় থাকা হয়?
অনিতাঃ আপনার শহরে। একই রোড।
শ্যামলঃ আমাকে কি চেনেন, কিংবা আমি আপনাকে?
অনিতাঃ না ঠিক পরিচিত না কেউ। আমি বগুড়ায় নতুন।
শ্যামলঃ পড়াশোনা?
অনিতাঃ হ্যাঁ।
শ্যামলঃ কিসে?
অনিতাঃ বাংলা। অনার্স ফাস্ট। এইচ কলেজ।
শ্যামলঃ হোস্টেল নাকি মেসবাড়ি?
অনিতাঃ সাবলেট।
শ্যামলঃ হ্যাঁ, কি যেন প্রশ্ন আপনার?
অনিতাঃ চন্দর সূর্যের আর কথা বলা হয়না কেন?
শ্যামলঃ চন্দ্র মারা গেছে। এখন কৃষ্ণপক্ষ সব নৈমনি-কে।
অনিতাঃ স্যরি!
শ্যামলঃ স্যরি কেন? সূর্যতো বেঁচে আছে।
অনিতাঃ কিভাবে মারা গেল চন্দর? যদি কিছু মনে না করেন..
শ্যামলঃ চেনা বৃত্ত পরিবর্তণ করে সুখ কিনতে গিয়েছিল। শানি- ওর সহ্য হয়নি। দূর্ভাগ্য, অচেনা পথে চলতে গিয়ে ব্ল্যাকহোলের সামনে পড়েছে। হা হা হা হা। ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে ধারণা আছে নিশ্চয়?
অনিতাঃ হ্যাঁ। আছে।
শ্যামলঃ বলুন, আর কিছু?
অনিতাঃ আবার কি আমাদের কথা হতে পারে?
শ্যামলঃ কথা হতে পারে। তবে কন্ডিশন প্রযোজ্য।
অনিতাঃ কন্ডিশন?
শ্যামলঃ হ্যাঁ। কন্ডিশন।
অনিতাঃ কি কন্ডিশন?
শ্যামলঃ আমার সাথে প্রেম করতে হবে। চন্দ্র মারা যাবার পর আমি অতি একা। হা হা হা হা। কি রাজি?
অনিতাঃ আমি ঠিক জানি না।
শ্যামলঃ ভেবে দেখেন। চাইলে অবশ্য
শেয়ারিং কেয়ারিং ডেয়ারিং ফ্যাক্টর হবে।
[ফোন রেখে দিলো অনিতা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বেলকনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকালো। চন্দ্রকে ক্রমশঃ গিলে ফেলছে মেঘ মালা।]
....................................................................................
Add caption |
সন্ধি ৩.
চরিত্রঃ বাদল, সমবয়সী তিন বন্ধু
স'ানঃ আড্ডা
সময়ঃ বিকেল
বয়সঃ বাদল সহ সবার বয়স ২৩
[ অনেকটা নির্জন রাস-ায় গাড়ি চালাতে চালাতে নিজে নিজে কথা বলছে
বাদল। এখন বয়স ৩৩।]
বাদলঃ এবার থামার সময় হয়েছে। চারদিক কি অদ্ভুত নিয়মেই না দৌঁড়াচ্ছে। কি বিভৎস্য এবং অসুখী এক একজন মানুষের দৌঁড়। জন্মদৌঁড়। আমি আর দৌঁড়াবো না। প্রয়োজন নেই। হারিনি আমি। দৌঁড়ে হারিনি আমি। বিভৎস্য সৌন্দর্যে আমি জিতে গেছি। ওদের অবস'ান কি এখন? সুবর্ণ, আলতাফ, সরো..।
[প্যাকেট খুলে সিগারেট জ্বালালো বাদল॥ ফ্ল্যাশব্যাক॥ বাদলসহ চার বন্ধুর আড্ডা। সবার বয়স ২৩। দুজনার হাতে সিগারেট। চা’র কাপে চুমুক। প্রাণবন- আড্ডা।]
১ম বন্ধুঃ তাহলে বন্ধু তুমি নিশ্চিত?
বাদলঃ নিশ্চিত।
২য় বন্ধুঃ কবে কিনছো গাড়ি?
বাদলঃ সেদিন সকালে। যে দিন ৩৩
বছর বয়সে পা দিয়ে ঘুম ভাংবে আমার।
১ম বন্ধুঃ এখন কত চলছে?
বাদলঃ ২৩।
৩য় বন্ধুঃ দ্রুত চা টেনে ফুটো। নিশ্চিত বলতে পারো গত এক সপ্তাহে, এক মাসে
কিংবা এক বছরে তিনবেলা ভাত পেয়েছো একদিন?
বাদলঃ তো?
৩য় বন্ধুঃ গাড়ি কেনার স্বপ্ন!
বাদলঃ আস'া রাখতে পারো।
[ হো হো করে হেসে উঠলো অন্য দুই বন্ধু।]
১ম বন্ধুঃ কি গাড়ি কিনছো দোস-?
বাদলঃ টয়োটা।
২য় বন্ধুঃ টয়োটা কেন? বিএমডব্লিউ, ল্যান্ডক্লুজার কিনলেই পারো!
বাদলঃ না। টয়োটা। রিকন্ডিশন টয়োটা।
[হো হো করে হেসে উঠলো তিন জন। বাদলও হাসলো।]
.................................................................................
সন্ধি. ৪
চরিত্রঃ অনিতা, শ্যামল
স'ানঃ পার্ক
সময়ঃ সকাল
[আজ অনিতার সাথে শ্যামলের প্রথম দেখা। উচ্ছাসিত অনিতা। যতোটা সম্ভব নিজেকে সাজিয়ে পার্কে পৌঁছালো অনিতা। অপরূপা। শ্যামল বসেছিল আগে থেকে। হাতে সিগারেট। কালো পাঞ্জাবী। বড় চুল। চোখে বড় ফ্রেমের চশমা। জিন্স। একজন আধুনিক কবি। পার্কে পৌঁছে অনিতা ফোন করলে শ্যামল পাশে এলো।]
শ্যামলঃ আমি বোধহয় এখনই নিশ্চিত হতে পারছি,
অবশিষ্ঠে তোমাকে পাচ্ছি না।
অনিতাঃ কেন?
শ্যামলঃ কবির কপালে এতো সুন্দর নারী ভাগ্যদেবতা লিখেনি।
অনিতাঃ হা হা হা। তোমার কপালে
না লিখুন। আমার কপালে
তো লিখতে পারেন।
শ্যামলঃ গত তিন মাস ফোনে কথা বলার পর আজ আমাদের প্রথম দেখা। গত তিন মাস কথা বলার পর প্রতিদিনই কল্পনায় তোমার স্কেচ আঁকার
চেষ্টা করেছি। ব্যর্থতা
কি জানো? এতোটা প্রাকৃতিক স্কেচ কখনো আঁকতে পারিনি।
অনিতাঃ শ্যামল, আমি জানি আমি সুন্দর। এই কথাগুলো নতুন করে শুনে কাজ নেই। অন্য কথা বলো। একটা মজার বিষয় কি শোন,
আমি বেশি সুন্দর বলে আমার কোন প্রেম হয়নি।
শ্যামলঃ কেন?
অনিতাঃ সাহস করে কেউ প্রপোজ করেনি। হা হা হা হা..
শ্যামলঃ প্রিয়তমেষু, বিমূর্ত্ববাদের অসুখে বড্ড ক্লান- আমি। অনেক বলেছি, আজ কোন কথা বলবো না। তোমাকে দেখবো। স্বপ্ন বানাবো। হাত ধরে হাঁটবো। হাটবোনা, মূলত বলতে পারো স্বর্গ বানিয়ে ভাসবো।
[অনিতা আবার তাকালো শ্যামলের দিকে। রোমাঞ্চিত। শ্যামল অনিতার হাত ধরে হাটছে। ‘শুধু একদিন
ভালবাসা মৃত্যু যে তারপর তাও যদি হয়/ আমি তাই চাই.’ সংক্রান- প্রেমের গান বাজছে
আকাশে বাতাসে।]
...............................................................................
সন্ধি. ৫
চরিত্রঃ বাদল, টিবয় বাদলঃ
স'ানঃ ফুটপাত
সময়ঃ বিকাল
বয়সঃ বাদল ৩৩, টিবয় ১০
[টি ফ্লাক্স পাশে ফুটপাতে বসেছিল টিবয়। বাদলের সাদা রঙের টয়োটা ছেলেটির পাশে এসে দাঁড়ালো। জানালা দিয়ে মাথা বেড় করে ছেলেটির থেকে চা নিলো বাদল। ছেলেটি বাদলের দিকে তাকিয়ে। ]
বাদলঃ নাম কি?
টিবয়ঃ বিজন টু।
বাদলঃ বিজন টু কেন?
টিবয়ঃ দিপু নাম্বার টুয়ের মতো বিষয়।
বাদলঃ দিপু নাম্বার টু পড়েছিস?
টিবয়ঃ সিনেমা দেখেছি।
বাদলঃ গুড। বিজন, এখন কোথায়
আছি আমরা?
টিবয়ঃ শাহবাগ। কোথায় যাবেন?
[বাদল বাম সিটে রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকালো।]
টিবয়ঃ কোথায় যাবেন?
বাদলঃ বনানী। অনিতার বুটিক
হাউজে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন' যাবো না। যাব না কেন জানিস, মনে কর আমি অনিতার সামনে গিয়ে বললাম, আমার পথ
শেষ তাই তোমার কাছে এসেছি। অনিতা বলবে, ভুল জায়গায় এসেছো।
টিবয়ঃ অনিতা কে?
বাদলঃ চিনতে পারলি না? রাত্রি নিবাসের নারী।
[উদ্দেশ্যহীন চলছে বাদলের গাড়ি। মোড় পেলে ঘুরাচ্ছে স্টিয়ারিং। স্লো ভ্যলিউমে বাজছে মাহমুদজ্জামান বাবু’র গান,‘মেঘ বালিকা
ও মেঘ বালিকা/ কত স্বপ্ন কথা ছিল তোমার সাথে/ অথচ ক্লানি-র পথ চলা থামে না/ বেড়ে চলে
জীবনের নীরবতা’। ]
............................................................................
সন্ধি. ৬
চরিত্রঃ শ্যামল, অনিতা
স'ানঃ অনিতার রুম
সময়ঃ রাত
বয়সঃ অনিতা ১৭, শ্যামল ২৫
[দ্বিতীয় বারের মতো সেলফোন বাজলে রিসিভ করলো অনিতা। ঘুম জড়ানো কণ্ঠ।]
শ্যামলঃ ঘুমিয়েছো? প্রিয় জেগে আছি আমি/ তোমারে আবিস্কার করি অন-র যামি/ প্রিয় ঘুমিয়েছো
তুমি?
অনিতাঃ হুম।
শ্যামলঃ নিদ্রাদেবীর পূর্ণ আশির্বাদ?
অনিতাঃ হুম।
শ্যামলঃ একটু জাগবে?
অনিতাঃ না।
শ্যামলঃ ফোন রাখবো?
অনিতাঃ না।
শ্যামলঃ কথা বলবে?
অনিতাঃ তুমি বলো আমি শুনি।
শ্যামলঃ একটু উঠবে?
অনিতাঃ কেন?
শ্যামলঃ পশ্চিম আকাশে চমৎকার একটি তারা।
অনিতাঃ ওকে।
শ্যামলঃ ওকে মানে কি?
অনিতাঃ ওকে মানে ঠিকআছে।
শ্যামলঃ ফোন রাখবো?
অনিতাঃ না।
শ্যামলঃ একটা কথা রাখবে?
অনিতাঃ হুম।
শ্যামলঃ আমার সাথে একটা রাত থাকবে?
অনিতাঃ কি?
শ্যামলঃ তোমাকে দেখবো?
অনিতাঃ আমাকে দেখোনি?
শ্যামলঃ সুন্দরীরা কিভাবে ঘুমায় সেটা দেখবো। জ্যোৎস্নার সাথে। জ্যোৎস্নাবিহার বলতে পারো।
অনিতাঃ ভয় করবে আমার।
শ্যামলঃ তোমার শরীরে নিঃশ্বাস ঠেকাবো না। বিশ্বাস রাখতে পারো।
অনিতাঃ ওকে।
শ্যামলঃ ওকে মানে কি?
অনিতাঃ ওকে মানে ঠিকআছে।
.............................................................................
সন্ধি. ৭
চরিত্রঃ অনিতা, শ্যামল
স'ানঃ আবাসিক হোটেল
সময়ঃ রাত
বয়সঃ অনিতা ১৭, শ্যামল ২৫
[শহরের দামী এক আবাসিক হোটেলের গেটে রিকশা থেকে নামলো বাদল আর
অনিতা। রুম বুক
করার সময় রিলেশনে বাদল জানালো অনিতা তার স্ত্রী। দ্বিতলায় চমৎকার একটা রুমে পৌঁছালো ওরা।]
অনিতাঃ এখানে আনলে কেন?
শ্যামলঃ জ্যোৎস্নাবিহারের জন্য এরচে’ নির্জন জায়গা হয় না।
[ওয়েটার রুমে একটা বোতল দিয়ে গেল। যত্নসহকারে গ্লাসে মদ ঢালছে বাদল। অনিতা অবাক হয়ে দেখছে।]
অনিতাঃ তুমি মদ খাও?
বাদলঃ খাইনা। তবে আজ যখন
স্বর্গে পৌঁছেছি তখন এক একটু সুরা পান অত্যাবশ্যক বটে। তুমি ইচ্ছা করলে নিতে পারো। দারুন লাগবে।
[ভেতরের দরজা খুলে বেলকনিতে দাঁড়ালো অনিতা। শ্যামল রেকর্ডারে গান বাজিয়ে দিলো। বেশ শব্দ। অনিতার মন খারাপ। শ্যামল কয়েকবার ডাকলো অনিতাকে। ঘড়ির কাটা ততক্ষনে একঘন্টা পেরিয়েছে। রাত এগারোটা। বেলকনিতে এসে খানিকটা মাতাল অবস'ায় অনিতার
কাধে হাত দিয়ে রুমে নিতে চাইলো শ্যামল।]
অনিতাঃ দারুন জ্যোৎস্না আজ, তাইনা। শ্যামল, কবিতা বলো। আমি শুনি।
শ্যামলঃ প্রিয়তমেষু সাবরিনা, এ রাতের আয়ু সুদীর্ঘ। জ্যোৎস্না দেখার অনেক সময় পাবে। ভেতরে এসো। পাশাপাশি বসো। তোমাকে দেখি। কিংবা এখন তুমিও নিজেকে ভাবতে পারো এক খন্ড চন্দর। অত জ্যোৎস্নার ভিরেও চন্দ্রে ছায়া আছে। এই তার অপূর্ণতার খন্ডণ। ছিঃ সাবরিনা, তোমার অপূর্ণতা সয়না। এসো কাছে এসো। তোমার পূর্ণাঙ্গ হওয়া চাই।
[যতটা সম্ভব অনিতাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো শ্যামল। অনিতা বাধা দিকে চাইলো। কিন' না। পারলো না। অনিতার মুখ থেকে বেরুনো,
‘না’, ‘না শ্যামল, প্লিজ’.. সংক্রান- শব্দের চেয়ে প্রকট হয়ে উঠলো সাউন্ড সিস্টেমে বাজানো
‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে/ অঝোড়ে নামবে বুঝি...’ গান। এ্যাস্ট্রেতে এমনিতেই জ্বলে জ্বলে শ্যামলের সিগারেট হলো ছাইয়ের
দন্ড। তখন চন্দ্রে একটু একটু করে মেঘ
জমা হচ্ছিলো।]
...............................................................................
সন্ধি . ৮
চরিত্রঃ অনিতা, টুম্পা
স'ানঃ অনিতার ড্রয়িংরুম
সময়ঃ সকাল
বয়সঃ অনিতা ৩২, টুম্পা ২৫
[মানবাধিকার কর্মী টুম্পা। একটা এনজিও’র হয়ে এইডস আক্রান-দের অভিজ্ঞতা থেকে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম
তৈরী করে। টুম্পা অনিতার
মুখোমুখি বসে কথা শুনছে। মঝেমাঝে
ক্লিপবোর্ডের কাগজে নোট লিখছে।
অনিতাঃ ঐ দিন ছিল আমার প্রথম মৃত্যু। একজন কবির কাছে নারীত্বের অবমাননা আমাকে তীলে তীলে ক্ষয় করেছিল। সতের বছর বয়সে পুড়ে গেল আমার চঞ্চলতা, উচ্ছলতা।
[কিছুক্ষণ নিরবতা। কেউ একজন চা দিয়ে গেল। দুইজন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। টুম্পা অতি আগ্রহে মাঝেমাঝে তাকাচ্ছে অনিতার দিকে।]
অনিতাঃ প্রেম করো টুম্পা?
টুম্পাঃ না। আমি ঠিক
এখনো...
অনিতাঃ না কেন? প্রেম করবে। অবশ্যই করবে। পারলে সংস্কার করে নিজের মাঝে তৈরী করে নেবে ক্লিওপ্রেট্রা সত্ত্বা। হা হা হা হা।
[টুম্পা চুপচাপ।]
অনিতাঃ নারী ক’বর মরে জানো? অজস্রবার। প্রতি দিনে রাতে নারীর মৃত্যু হয়। কি সব বিভৎস্য মৃত্যু। নারী কখনোই বলেনা তার সহস্র মৃত্যুর কথা। আবার অনেকে জানেই না কিভাবে তার মৃত্যুহয়। কি অবোধ এক একজন।
টুম্পাঃ মানে?
অনিতাঃ [কিছুক্ষণ চুপ থেকে] আমার দ্বিতীয় মৃত্যু হলো তার দিন পনের পর। খুব দু্রত পাল্টে গেল আমার চেনা পৃথিবী।
হঠাৎই সেদিন বৃষ্টি। বৃষ্টি হবার
কথা নয় অথচ অঝোড় বৃষ্টি। যে বাড়িতে
সাবলেট থাকতাম সে বাড়িওয়ালা, যাকে আমি মামা বলে ডাকতাম, তিনি ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। অনেক রাত। বৃষ্টির সাথে আমিও কাঁদছি। শ্যামলের পৌরাণিক প্রবৃত্তি আমাকে অসহায় করে তুলেছিল। মধ্যরাতে বজ্রপাত বাড়লো। দরজায় মামার ডাক। দরজা খুলতেই ঘটলো আমার দ্বিতীয় মৃত্যু। মনেপ্রাণে বিপর্যস- আমার কাছে তার হিংস্র থাবাগুলো বজ্রপাতের
কম ছিল না। গ্রাম আর
শহর সেদিন আমার কাছে নতুন নতুন পার্থক্য তৈরী করলো। অথচ কোনভাবেই বাড়িতে ঘটনাগুলো জানানো যাবে না। তাহলে তখনই শেষ হয়ে যেত পড়াশোনা। আজ এতোবছর পর তোমাকে বলছি। সেদিন পাশের কেউ ছিল না,
যার কাছে থেকে পথ খুঁজে নিতাম।
টুম্পাঃ শ্যামল সাহেব আর খোঁজখবর নেননি?
অনিতাঃ বোকার মতো কথা বলো না। [কিছুক্ষণ চুপ থেকে।] টুম্পা, তুমি বরং আজ যাও। আমি একা থাকতে চাই।
................................................................................
সন্ধি. ৯
চরিত্রঃ বাদল, নার্স
স'ানঃ বাদলের রুম, হাসপাতাল
সময়ঃ রাত
[রুমে প্রবেশ করে জুতাসহ বেডে শুয়ে পড়লো বাদল। একবার টেলিফোন বাজলো। রিসিভ করলো না। পাশের টেবিলে পানির গ্লাসে হাত বাড়াতেই খামটা চোখে পড়লো। গ্লাস রেখে দিয়ে খামটা খুললো বাদল। ডাাগনোস্টিক সেন্টারের খাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো মন খারাপ। রিসিভার তুলে টেলিফোনে নাম্বার টিপলো। ওপাশ থেকে রিসিভ করলো একজন নার্স]
নার্সঃ কে বলছেন প্লিজ..
বাদলঃ বাদল। পৃথিবী যার
সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করবে বলে সত্ত্বর ভাবছে।
নার্সঃ বলুন স্যার, কেমন আছেন? কোন সমস্যা কি?
বাদলঃ কোন সমস্যা নাই। এখন অতীব সুখীদের একজন আমি। ও হ্যাঁ, আজ আমি গাড়ি কিনেছি। সাদা রঙের টয়োটা। রিকন্ডিশন। খবরটা কাউকে জানাতে ইচ্ছে করছিল। কেউ নাই আমার, তাই আপনাকে বললাম।
নার্সঃ স্যার, আপনার কণ্ঠ জড়ানো লাগছে,
কোন সমস্যা?
বাদলঃ আপনি কি জানেন, আজ আমার জন্মদিবস। আজ আমার তেত্রিশ।
নার্সঃ স্যরি স্যার।
বাদলঃ সমস্যা নাই। জন্মদিন
না জানলেও মৃত্যুদিবস সম্পর্কে জানবেন। হা হা হা হা ।
নার্সঃ এমনটি ভাববেন না স্যার।
বাদলঃ রিপোর্টটা কি আরেকবার চেক করা যায়?
নার্সঃ তিনটে ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে চেক করা হয়েছে। একই রেজাল্ট। আপনি বললেন, কাল আবারো চেক করা হবে।
[বাদল ফোন রেখে দিয়ে ফ্রিজ থেকে ভদকার বোতল বের করলো। দ্রুত দু’পেগ গলায় ঢালার পর দু’হাতে চেপে ধরলো মাথা। চোখেমুখে ক্লানি-। সিগারেট জ্বালালো বাদল।]
.............................................................................
চরিত্রঃ বাদল, অনিতা
স'ানঃ পাশাপাশি ফ্ল্যাট
সময়ঃ রাত
বয়সঃ বাদল ৩৩, অনিতা ৩২
[অনিতার রুমে টেলিফোন বাজছে। বাদলের পাশের ফ্ল্যাটে অনিতাও একা থাকে। ফোন করেছে বাদল। দ্বিতীয়বার ফোন বাজলে শেষের দিকে রিসিভ করলো অনিতা।]
অনিতাঃ হ্যালো..
বাদলঃ অনিতা, আমার ব্রেণ ক্যান্সার। খুব স্বল্প সময়ের জন্য আছি। তোমার কাছে চলে আসি?
অনিতাঃ চাপা রাখো। আমি অনেক
ক্লান-। তোমার সাথে
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
বাদলঃ তিনটে ডায়াগনোস্টিকের রিপোর্ট আছে। গতকাল পেয়েছি রিপোর্টগুলো।
অনিতাঃ ভাল করে পড়ে দেখ, ওগুলো প্রেমপত্তর হতে পারে।
বাদলঃ মৃত্যু যদি চূড়ান- প্রেম হয়, তাহলে প্রেমপত্তরই বটে। কিন' আজ আমার জন্মদিবস।
অনিতাঃ তো?
বাদলঃ জন্মদিবসে মিথ্যে বলার ইচ্ছে নেই।
অনিতাঃ অনেক রাত হয়েছে। সকালে বাসী জন্মদিবসের ফুল পাঠাবো। আজ আর ফোন করবে না। রাখলাম। জরুরী হিসেব করছি।
বাদলঃ অনিতাজি, অত টাকা কি করবে তুমি?
অনিতাঃ একদিন গভীর রাতে হেলিকপ্টারে উড়ে উড়ে টাকাগুলো ছিটিয়ে দেব। তোমার টাকা কি হবে?
বাদলঃ মদ খাবো।
[ফোন রেখে দিলো অনিতা। গ্লাসে মদ ঢালছে বাদল। অন্য হাতে সিগারেট। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ২.২৭]
........................................................................
সন্ধি. ১১
চরিত্রঃ বাদল, শোভা
স'ানঃ বই মার্কেট, কফি হাউস
সময়ঃ সকাল
[বইয়ের দোকান ঘুরে ঘুরে বই কিনছে বাদল। কয়েকটা বই হাতে নিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে থমকে দাঁড়ালো। কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। বামদিকে তাকলে বুঝলো একজন মহিলা তাকে উদ্দেশ্য করে এগিয়ে আসছে। কাছে এলে অবাক হলো বাদল। শোভা। বাদলের কৈশরের প্রথম প্রেমিকা।]
শোভাঃ চিনতে পারছো নিশ্চয়?
বাদলঃ শোভা। কলজের অর্ধেক
করে যাকে বামবুকে পুষেছিলাম একদিন। একদিন যে দূঃস্বপ্নের বাসস'ান ছেড়ে বুক ভেঙ্গে চলে গেল। ষোল বছর আগে যে তুমুল আলোড়িত করেছিল আমার দিনরাতগুলোকে।
শোভাঃ ষোল বছর পর?
বাদলঃ নারী আর মহিলার সংজ্ঞা জানো?
শোভাঃ অনেক কথা আছে। একটু সময়
দেবে?
বাদলঃ আর যে সময় নেই আমার।
[বাদলের দিকে গাঢ় করে তাকালো শোভা। শোভার এই তাকানো বাদলের কাছে ঝড় বলে মনে হলো।]
বাদলঃ চলো একটু বসি।
[কফি হাউসে বসলে ওয়েটার দু’কাপ কফি দিয়ে গেল।]
শোভাঃ ভাবিনি ষোল বছর পর এভাবে কথা হবে আবার। শুনেছি তুমি অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন হয়েছো কেন?
ধনী হয়েছো বলে নাকি বাউলা স্বভাব এখনো আছে তোমার?
[বাদল কোন কথা বললো না। শোভার দিকে তাকালো। বাদল সিগারেট জ্বালালো। ]
শোভাঃ এতদিন পর কেমন আছো জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা করছে। আজ এতো বছর পর সত্য বলেও আমার দায় এড়াতে পারবো না। তবু বিশ্বাস রাখকে পারো আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনি। গ্রামের একটা মেয়ের পরিবারের বিপক্ষে লড়ার কতটুকু ক্ষমতা থাকতে
পারে নিশ্চয় বোঝ তুমি। তাছাড়া তোমাকে
যে অবলম্বন করবো, এমন কোন অবস'ান তোমার ছিলনা।
বাদলঃ এখন বেশ শক্ত অবস'ান আমার। আসবে তুমি?
[আতঙ্কিত হয়ে তাকালো শোভা। বাদল শব্দ করে হাসলো। ]
বাদলঃ এখনো বেশ সুন্দরী তুমি। শুধু আমিই হারিয়েছি আমাকে। যাহোক, পুরনো কোনকিছু আর আমাকে দোলাবে না। তারচে’ তোমার খবর বলো, স্বামী সন-ান?
শোভাঃ আমি ভাল নাই। ষোল বছর
পর দেখাতে এসব বলার কোন মানে হয় না। কিন' তুমিতো আমার বন্ধুও ছিলে। [কিছুক্ষণ থামলো শোভা]। ও চাকুরী হারিয়েছে মাস দুয়েক। ডায়াবেটিস। হাসপাতালেই রাখতে হয় বেশি সময়। অবশেষে আমিই নামলাম চাকরী খুঁজতে। বাঁচতে হবে তো। মেয়েটা স্কুলে পড়ে।
বাদলঃ তোমার মেয়ে?
শোভাঃ অবাক হচ্ছো? বিভা নাইনে পড়ে।
বাদলঃ আমার তো কেউ নাই। তাই বুঝিনি। তোমার মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। শোভার মেয়ে বিভা!
[কিছুক্ষণ চুপ থাকলো বাদল।]
বাদলঃ আমার অনেক কাজ আছে। আজ উঠতে হচ্ছে। তুমি কাল একবার বনানীতে যেয়ো। সাবা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউসের এমডি অনিতা ম্যাডমের সাথে দেখা
করো। আমি বলে দেব। তোমার ভাল একটা চাকরি হয়ে যাবে।
.............................................................................
সন্ধি. ১২
চরিত্রঃ অনিতা, টুম্পা, শোভা
স'ানঃ অনিতার অফিসরুম
সময়ঃ সকাল
[অনিতার মুখ বিষন্নতায় ভরা। ল্যাপটপে কাজ করছে। সামনের চেয়ারে বসা টুম্পা। টুম্পা খুটিয়ে দেখছে অনিতার অফিসরুম। অত্যাধুনিক। বেল টিপলো অনিতা। দড়জা ঠেলে ভেতর ঢুকলো একটা মেয়ে। অনিতার অফিসে সবাই মেয়ে। ]
অনিতাঃ শোভা ম্যাডামকে আসতে বলো। চা দিও। আর কিছু খাবে টুম্পা?
টুম্পাঃ না। ধন্যবাদ।
অনিতাঃ ঠিক আছে।
[অনিতা কাজে মন দিলো। শোভা ঢুকলো রুমে। চা দিয়ে গেল মেয়েটি। ]
অনিতাঃ টুম্পা, এ শোভা। শোভা এ প্রতিষ্ঠাণের নতুন ম্যানেজার। ও সব ঠিকঠাক পারবে বলে ধারনা করি। আর শোভা, ওর নাম টুম্পা। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছে। লেখালেখি করে। মানবাধিকার কর্মী। একটা এনজিও’র হয় গবেষণামূলক কাজ করছে।
দুজন দুজনকে দেখে নিলো আবারো।
অনিতাঃ শোভা, গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলবো। মনযোগসহ শোন। এ ককেদিনে হাউস সম্পর্কে তোমার ভাল ধারণা হবার কথা। টুম্পার এনজিও’র সাথে একটা চুক্তিনামা করেছি। বলকে পারো এখন থেকেএ হাউসের মালিকানা এনজিও’র। খুব সপ্রতি আমি সব ছেড়ে চলে যাবো। শোভা, আমি তোমার উপর আস'া রেখে যেতে চাই। আমাদের তিনটি শোরুম,
৭৫ জান কর্মী,
সবার দাত্বি তোমার। তুমি সব দেখাশোনা করবে। স্যাল্যরী, অফিস ব্যয়ের পর লভ্যাংশের ৭৫ পার্সেন্ট টুম্পার এনজিও পাবে। প্রতিষ্ঠাণের নাম কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠাণের সব রিপোর্ট টুম্পা দেখবে। আর হ্যা, লভ্যাংশের অবশিষ্ঠ ২৫ পার্সেন্টের মালিক তুমিসহ সব কর্মকর্তা
কর্মচারী। তোমরা প্রতিষ্ঠাণ
চালাতে ব্যর্থতা প্রকাশ করলে তবেই প্রতিষ্ঠাণের সব দায়িত্ব এনজিও নেবে। এমন নিয়মেই সাবা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউস চলবে। আমি কি বুঝাতে পেরেছি?
যেটুকু অস্পষ্টতা থাকলো- এই চুক্তিনামা পড়ো, সব ক্লিয়ার
হবে।
শোভাঃ ম্যাডাম, আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আপনি কোথায় যাবেন?
অনিতাঃ শোভা, প্লিজ। আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। প্রতিষ্ঠাণের দায়িত্বে প্রধাণ হিসেবে তুমি সব দেখো। পরে টুম্পা তোমার সাথে কিছুটা শেয়ার করবে।
সম্পূর্ণ বিষ্ময় নিয়ে উঠে গেল শোভা
টুম্পাঃ আমি কি আজ উঠবো?
অনিতাঃ তোমার কোন তাড়া আছে?
টুম্পাঃ আমার কোন তাড়া নাই। ক’টা দিন বরং আপনার পাশে কাটাতে চাই।
অনিতাঃ টুম্পা, চলো বরং খোলা কোথাও যাই। এ অফিস আর ভাল লাগছে না।
.............................................................................
সন্ধি. তের
চরিত্রঃ বাদল, বিভা
স'ানঃ বাদলের ফ্ল্যাট
সময়ঃ দুপুর
খাতা কলম নিয়ে হিসেব করছে বাদল। পাশে চার/ পাচটা ব্যাংক চেক বই। কয়েকবার কলিয় বেল বাজলে দরজা খুলতে গেল। দরজায় দেখে স্কুল ড্রেস পরা একটা মেয়ে দাড়িয়ে।
মেয়েঃ ভেতরে আসতে পারি? আপনার কাছে এসেছি আমি।
বাদলঃ আমি কি তোমাকে চিনি?
মেয়েঃ সম্ভবত না। তবে আমি
আপনাকে চিনি।
বাদলঃ কিভাবে বলোতো?
মেয়েঃ ভেতরে এসে তো কথা বলতে পারি। আমি আপনার বন্ধু।
বাদল হাসলো। ভেতর ঢুকে
ড্রয়িংরুমে বসলো দুজন। সবকিছু অগোছালো। বাদলও।
মেয়েঃ গত রাতে স্বপ্ন দেখেছি, বাদল নামে আমার এক বন্ধু স্বপ্ননিবাস নামক বাড়িতে থাকে যে আজ
দুপুরে রান্না করবে না। খাবেও না। স্বপ্নদেবী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাই, অন-ত আজরে
দিন আপনাকে রান্না করে থাওয়াতে। দুপুরতো হয়ে গেছে রান্না করেননি নিশ্চয়?
বাদলঃ না, রান্না করিনি।
মেয়েঃ তাহলে ঠিকঠাক স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্বপ্নদেবী।
বাদলঃ স্বপ্নদেবী কি আমাকে চেনেন?
মেয়েঃ হ্যা। চেনেন।
বাদলঃ ভাল করে মনে করে দেখোতো, তিনি স্বপ্নদেবী নাকি দূঃস্বপ্নদেবী?
মেয়েঃ আমি ঠিক জানি না। আপনার কাছ থেকে জানতে এসেছি।
বাদলঃ কি নাম তোমার?
মেয়েঃ স্বপ্ন।
বাদলঃ স্বপ্ন? আমার কাছে কেন এসেছো স্বপ্ন?
স্বপ্ন চুপচাপ
বাদলঃ কেন এসেছো স্বপ্ন?
স্বপ্নঃ রান্না করে খাওয়াতে এসেছি।
বাদলঃ মিথ্যা বলছো কেন?
মেয়েঃ তাহলে চলে যাবো?
বাদলঃ খিচুরি করতে পারো? অন্যকিছুর ব্যবস'া নাই।
রান্না শুরু করলো স্বপ্ন। বাদল আবার খাতা নিয়ে বসলো। ক্ষণিকপর বাদল উঠে গেল
রান্নাঘরের দিকে। স্বপ্ন বাদলকে
দেখে হাসলো।
বাদলঃ তোমার টাকার প্রতি লোভ আছে স্বপ্ন?
স্বপ্নঃ হ্যা আছে।
বাদলঃ কত টাকা চাই তোমার?
স্বপ্নঃ অনেক টাকা। অনেক।
বাদলঃ তোমাকে এক কোটি টাকা দিলে কি করবে?
স্বপ্নঃ উড়িয়ে দেব।
চমকে উঠলো বাদল। অনিতাও এমন
কথা বলেছিল।
........................................................................................
সন্ধি. 14
চরিত্রঃ অনিতা, টুম্পা
স'ানঃ ছাদ
সময়ঃ বিকেল
[ ছাদের সীমানায় প্রাচীর ধরে দুরে তাকিেয় আছে অনিতা, শরীরময় চাদর
জড়ানো। চোখমুখে
স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অসুস'তার ছাপ। টুম্পারও মন খারাপ]
টুম্পাঃ ঢাকা এলেন কিভাবে?
অনিতাঃ ঢাকা? এক কথায় বললেন বলা যায় স্রেফ টাকার জন্য। ঐ যে বলেছিলাম, আরো টাকা চাই আমার। অত্যন- লোভী আমি। টাকার মতো পেতে চেয়েছিলাম ডলার।
টুম্পাঃ ডলার? কিভাবে?
অনিতাঃ এক সময় ধরে নিয়েছিলাম, সাবরিনা মৃত। যে বেঁচে আছে, সে অনিতা। অনিতার বেঁচে থাকা বোনাস টাইম। জানোতো বোনাস টাইমে হাত খুলে খেলাতেই আনন্দ। এই শহরে এসে এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। শহরের কিছু নামকরা ফাইভস্টার সাদর আমন্ত্রণ জানালো। যতটা সম্ভব প্রেজেন্টেবল করে নিলাম নিজেকে। রুপতো দিলোই। ওই সুযোগে পরদেশীদের যতটা প্রিয় হতে পারলাম, আমার কাছে
তত ডলার আসতে থাকলো, হা হা হা হয়।
টুম্পাঃ সচরাচর ভঙ্গিতেই জীবনকে দেখতে অভ্যস- আমরা। জীবনের এই কঠিন দিকগুলোর কথা ট্রাজেডির সম্মুখীন না হলে ভাবিনা
এতটা গতানুগতিক আমরা, যেখানে পৃথিবীর ভেতরের পৃথিবীগুলো চোখে আসেনা।
অনিতাঃ বছর চারেক আসে একদিন খবর পেলাম বাবা অসুস'। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। অথচ আমার কাছে এক পাহাড় টাকা। কিন' আমি তাকে সহযোগিতা করার বাবা। তবু নিজেকে ধিক্কার দিলাম। ঐ পথ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনলাম। যে টাকা দিয়ে বাবার এক বোতল ওষুধ কিনতে পারিনি, কি হবে সে
টাকা দিয়ে? সাবা ফ্যাশন এন্ড বুটিক হাউস শুরু করলাম। এইতো চার বছরে তিনটা শাখা হয়েছে। ৭৫ জন নারী সুস'্য উপার্জন করে খেতে পারছে।
টুম্পাঃ নতুন একটা জীবন পেলেন। বুকের অভ্যন-রে কারোর জন্য টান অনুভব করেননি নতুন করে?
অনিতাঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যাঁ টান অনুভব করেছি। আবারো ভালবাসা আছড়ে পড়তে চেয়েছে মনেপ্রানে। কল্পনায় এঁকেছি সংসারের স্কেচ, কিন'। কিন' তখনই সময় শেষ হয়ে গেল আমার, যখন নতুন করে শুরু করতে চাইলাম। [কিছুক্ষণ চুপ থেকে’ আমার পাশের ফ্ল্যাটে বাদল নামের একজন নিঃসঙ্গ থাকে। ও যখন সঙ্গ চাইলো, যখন ওকে সঙ্গ দিতে চাইলাম ঠিক তখন জানলাম আমি এইচআইভি পজেটিভ।
.......................................................................................
চরিত্রঃ অনিতা, টুম্পা
স'ানঃ ক্রিসেন্ট লেক
সময়ঃ দুপুর/বিকেল
(অনেকটা নির্জনে লেকের ধারে বসে অনিতা আর টুম্পা কথা বলছে।)
অনিতাঃ সাবলেট ছেড়ে ছাত্রী হোস্টেলে উঠলাম। নিজের ভেতর এতটা অসহায় হয়ে উঠেছিলাম, তাই ভাবলাম
আত্যপ্রত্যয়ী হওয়া দরকার। ওভাবে ভেঙ্গে
পড়ার মানে হয় না। একটা পার্ট
টাইম জব নিলাম। টুম্পা, আমার উপর
বোধহয় পূর্ব জনমের তীব্র অভিশাপ ছিল। তাই এরকম রূপ পেয়েছিলাম। অজস্র মানুষের অবশেসনের। কারণ হয়েছি। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তিন মাসের মধ্যেই বসের লালসার শিকার হলাম। বসের পর অফিসের কলিগ,
ক্লাসের বয়ফ্রেন্ড। উয়। টুম্পা, আমি কাউকে বুঝাতে পারিনি।
টুম্পাঃ তখন কি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন?
অনিতাঃ না। তা কেন? তখন বরং
আমি আমাকে আবিষ্কার করেছি।
টুম্পাঃ কি রকম?
অনিতাঃ বারবার হারার পর একদিন ঘুরে দাঁড়ালাম। এবার অর্জনের পালা। আমার জীবনের মোড় পাল্টানো শব্দের নাম, টাচ ভ্যালু। ঠিক তখন সাবরিনা কিংবা সাবা থেকে আমার নাম হলো অনিতা। আমার লাক পজেটিভ, হ্যালো, খুব অল্প সময়েই হয়ে উঠলাম শহরের প্রথম শ্রেণীর কট। বয়স্ক ধনীক শ্রেণী লুফেনিল। সবচেয়ে নামী দামী হোটেলগুলো হয়ে উঠলো আমার বাড়ির মত। মজার ব্যাপার কি জানো,
বয়ফ্রেন্ডদের চেয়ে ওদের বাবাদের প্রিয়জন হয়েছিলাম। আমি তখন সুতো ছেড়া রঙিন ঘুরি, বুঝলে আমার কোন কিছুটান নাই। বাবা মার সাথেও সম্পর্ক যখন শেষ হলো।
টুম্পাঃ জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছে করেনি কখনো?
অনিতাঃ কেন, পালাবো কেন? আমি তখন মহান মানবী। পঞ্চপুরুষের অতি স্পর্শে বেশ্যা হয় আর বত্রিশে নারী। আমার তখন অবস'ান কত জানো? কত পঞ্চপুরুষের সুস্পর্শ আমাকে বেশ্যার চেয়ে মহানতর করে তুলেছিল। অপেক্ষা ছিল শুধু নারী হবার। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে)
আমার তখন কুড়ি/একুশ। অনার্স শেষ
করার পর ব্যাংক এ্যাকাউন্ট দেখে চমকে উঠেছিলাম। সত্যিই চমকে উঠেছিলাম। ঐ বয়সের কোন মেয়ে অত টাকার মালিক হয় না। আমার কিছু ইচ্ছে করতো জানো? ইচ্ছে করতো, টাকাগুলো ব্যাংক থেকে তুলে টাকায় পাহাড়ে বিবস্ত্র ঘুমাই। টাকাতো নয়, ওগুলো শরীরেরই এক একটি অংশ। প্রচন্ড নেশায় নির্জিব করতে ইচ্ছে করতো নিজেকে। কিন' না, টাকার কাছে নেশা সামান্যই। আরো টাকা চাই আমার। আরো।
(অনিতার চোখ থেকে ঝড়ে পড়ছে অশ্রুবিন্দু। টুম্পারও মন খারাপ। এখনই একফোটা অশ্রুবিন্দু ঝড়ে পড়বে বলে চোখে জমে আছে।)
.......................................................................................
চরিত্রঃ বাদল, বিভা
স'ানঃ বাদলের ফ্ল্যাট
সময়ঃ বিকেল
(সোফায় মুখোমুখি বসে আছে বাদল আর বিভা। বাদলের হাতে সিগারেট। সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার, ভদকার বোতলে লেখাগুলো পড়ছে বিভা।)
বিভাঃ আমি চলে যাবো। সম্ভবত বয়সে
আপনি আমার ডাবল। তবু আপনাকে
বন্ধু মনে করে এসেছিলাম। আমি আপনাকে
শুনতে চাই। আর জোর করে
আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করলে খুশি হবো। বাদল সাহেব, প্লিজ।
বাদলঃ বেশ বুদ্ধিমতি মেয়ে তুমি। জানিনা আমাকে কতটা জানো। আমার কৌতুহল কম। তাছাড়া তোমাকে পেয়ে
কিছু সুবিধা হলো। অনেক বছর
কথা বলা হয়না কারো সাথে।
বিভাঃ আপনি খুব একটা?
বাদলঃ হ্যাঁ।
বিভাঃ সাত শ’ কোটি মানুষ পৃথিবীতে। কারো সাথে কথা বলা হয়না কেন?
বাদলঃ ধরে নিচ্ছি তুমি আমাকে তেমন জানো না। আমাকে দেখে স্বাভাবিক একজন মানুষ মনে হতে পারে তোমার। কিন' স্বপ্ন, পৃথিবীর সেরা কিছু বিভৎস্য মানুষদের একজন আমি। বিভৎস্য মানুষরা অন্যদের সাথে মিশতে পারে না।
বিভাঃ তাহলে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন কেন?
কেন উন্মোচন করছেন বিভৎস্যত?
বাদলঃ তুমি উত্তেজিত হলে আমি কিছু বলতে চাইবো না। মেয়ে, আমার সময় শেষ। তাই তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। তাছাড়া তুমি আমাকে বন্ধু বলেছো।
বিভাঃ সময় শেষ মানে কি?
বাদলঃ খুব সহজ করে বললে বলা যায়, মৃত্যু চূড়ান- পর্যায়ে হেঁটে এসেছি আমি। রিপোর্টের এই কাগজগুলো বলছে আমার স্নায়ুক্যান্সার। আর ক’দিন, ক’ঘন্টা, ক’ সেকেন্ড আমার জন্য বরাদ্ধ আমি অনিশ্চিত। এই সময়ে তোমাকে পেয়ে সুবিধা হলো। তোমার সহযোগিতা লাগবে আমার।
(বাদল খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললো। বিভা কাঁদছে। চোখ থেকে গাল বেয়ে ঝড়ে পড়ছে অশ্রুবিন্দু। শব্দহীন)
বিভাঃ আপনি আসলেই বিভৎষ্য। এত সহজে এই কঠিন কথাগুলো বিভৎস্য মানুষরাই বলতে পারে।
(বাদল হাসলো, শব্দ করে হাসলো)
বাদলঃ স্বপ্ন, তুমি কিন' দুঃস্বপ্ন নও। মন খারাপ করে বসে আছো কেন? একটা গান গাও তো, মৌসুমী ভৌমিকের, আমি শুনেছি
সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন- ছুঁয়ে এসেছো।
বিভাঃ আমি গান পারি না।
বাদলঃ নাচ?
বিভাঃ না।
বাদলঃ স্বপ্ন, বিশুদ্ধ জীবনবোধে বাস-বতা মেনে নিতে হয়। মন খারাপ, মন ভালো খুব সামান্য বিষয়। তারচে আমাকে ডিসিশাল নিতে সাহায্য করো।
বিভাঃ বুঝতে পারছি না।
বাদলঃ কি?
বিভাঃ আপনাকে।
বাদলঃ আমি সেইসব বিভৎস্য মানুষদের একজন;
যারা চলে যাবার আগে ভাল মানুষের ভূমিকা নেয়। সম্ভবত আমিও তাই করতে চাচ্ছি।
(কিছুক্ষণ নিরবতা, বাদলের হাতে সিগারেট। বিভাগ গভীরভাবে দেখছে বাদলকে)
বাদলঃ আমার প্রায় চার কোটি টাকা জমে আছে ব্যাংকে। উপার্জন করতে শেখার পর থেকে সব টাকা জমিয়েছি। কখনো কোন ভাল কাজ করিনি। জমিয়ে জমিয়ে টাকার পাহাড় গড়েছি। এই টাকাগুলো এখন আমার জন্য দুঃস্বপ্ন। বলতে পারো এখন টাকাগুলো কি করবো?
বিভাঃ আপনার উত্তরসূরী?
বাদলঃ নিজের বলতে কেউ নেই। উত্তরসুরী বলতে ছোটভাইয়ের ছেলে আছে। সাত বছরের মতো বয়স হতে পারে। আমি ওকে দেখিনি।
বিভাঃ তাহলে ওকেই দিয়ে যাবেন। ও বড় হয়ে জানলে খুশি হবে।
বাদলঃ আমার প্রথম মৃত্যু হয়েছিল শোভা চলে যাবার পর। শোভা ছিল স্বপ্নমানবী। মাথায় নারকেল তেল দিয়ে দিতে চেয়ে চলে গেল মা। আমি হলাম ছন্নছাড়া, পড়াশোনা চুকে গেল। তারপরের কয়েখ বছর আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। দিনে একবেলও খাবার যোগাড় করতে পারিনি কতদিন! রেল স্টেশনে পার্কে
কত রাত কাটিয়েছি। জীবন ধারার
প্রতিটি অংশই বিরুপ প্রভাব ফেললো আমার উপর। কোন দিক না দেখতে পেয়ে তেইশ বছর বয়সে পা বাড়ালাম নষ্টদের দিকে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ভাগ্যদেবী প্রসন্ন। জর্গসের স্নাগলিং মহানতর করে তুলেছে আমাকে। আশা এবং হতাশাবাদীদের হাতে মাদক তুলে দিয়ে আমি জমিয়েছি টাকা। বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়েও তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছি উচ্চবিলাস। (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) এখনতো অনেক টাকা আছে। বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করতে পারি। কিন' অন্যদের জীবন ধ্বংস করা টাকা দিয়ে নিজের জীবন বাঁচাবো ভাবতেও
ঘৃণা জমছে নিজের প্রতি। বিশ্বাস
করো, আমি নষ্ট হতে চাইনি। স্বপ্ন, আমার ভাইয়ের ছেলে, যাকে আমি আর্শিবাদ করতে পারিনি তাকে এসব টাকার নামে অভিশাপ দিতে
পারিনা। তারচে অন্য
একটা ভাবনা কাজ করছে মাথায় তুমি যদি সহযোগিতা করো।
বিভাঃ কি ভাবনা আপনার?
বাদলঃ এই টাকায় দেশের প্রতিটি জেলাতে পাবলিক লাইব্রেরী হতে পারে। প্রচুর শ্রম এবং সময়ের দরকার। শ্রম কিংবা সময় এখন কোনটাই নাই আমার। বন্ধু হিসেবে তোমাকে অনুরোধ করবো দায়িত্বটা তুমি নাও। কিভাবে বাস-বায়ন হতে পারে তার প্ল্যান তৈরী করো। চলে যাবার আগে নিশ্চিত হতে পারলে আমার ভাল লাগবে।
বিভাঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আজ এখন আপনাকে স্বীকৃতি দিচ্ছিনা বা অস্বীকারও করছি
না। বন্ধু বলে ডেকেছি বলে দায়িত্বটা
কাঁধে নিলাম। যদিও অতবড়
কাঁধ আমার নয়। আজ উঠছি। আশা করি আপনার সাথে আবার দেখা হবে। আর না বলতে চাইলেও একটা কথা বলতে হচ্ছে আমি স্বপ্ন নই, আমার নাম
বিভা। মায়ের নাম শোভা।
(বাদল দ্রুত তাকালো বিভার দিকে। বিভা চলে গেল। গ্লাসে ভদকা ঢালছে বাদল।)
.......................................................................................
সন্ধি 17.
চরিত্রঃ অনিতা, টুম্পা
স'ানঃ ছাদ
সময়ঃ বিকেল
[ ছাদের সীমানায় প্রাচীর ধরে দুরে তাকিেয় আছে অনিতা, শরীরময় চাদর
জড়ানো। চোখমুখে
স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অসুস'তার ছাপ। টুম্পারও মন খারাপ]
টুম্পাঃ ঢাকা এলেন কিভাবে?
অনিতাঃ ঢাকা? এক কথায় বললেন বলা যায় স্রেফ টাকার জন্য। ঐ যে বলেছিলাম, আরো টাকা চাই আমার। অত্যন- লোভী আমি। টাকার মতো পেতে চেয়েছিলাম ডলার।
টুম্পাঃ ডলার? কিভাবে?
অনিতাঃ এক সময় ধরে নিয়েছিলাম, সাবরিনা মৃত। যে বেঁচে আছে, সে অনিতা। অনিতার বেঁচে থাকা বোনাস টাইম। জানোতো বোনাস টাইমে হাত খুলে খেলাতেই আনন্দ। এই শহরে এসে এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। শহরের কিছু নামকরা ফাইভস্টার সাদর আমন্ত্রণ জানালো। যতটা সম্ভব প্রেজেন্টেবল করে নিলাম নিজেকে। রুপতো দিলোই। ওই সুযোগে পরদেশীদের যতটা প্রিয় হতে পারলাম, আমার কাছে
তত ডলার আসতে থাকলো, হা হা হা হয়।
টুম্পাঃ সচরাচর ভঙ্গিতেই জীবনকে দেখতে অভ্যস- আমরা। জীবনের এই কঠিন দিকগুলোর কথা ট্রাজেডির সম্মুখীন না হলে ভাবিনা
এতটা গতানুগতিক আমরা, যেখানে পৃথিবীর ভেতরের পৃথিবীগুলো চোখে আসেনা।
অনিতাঃ বছর চারেক আসে একদিন খবর পেলাম বাবা অসুস'। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। অথচ আমার কাছে এক পাহাড় টাকা। কিন' আমি তাকে সহযোগিতা করার বাবা। তবু নিজেকে ধিক্কার দিলাম। ঐ পথ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনলাম। যে টাকা দিয়ে বাবার এক বোতল ওষুধ কিনতে পারিনি, কি হবে সে
টাকা দিয়ে? সাবা ফ্যাশন এন্ড বুটিক হাউস শুরু করলাম। এইতো চার বছরে তিনটা শাখা হয়েছে। ৭৫ জন নারী সুস'্য উপার্জন করে খেতে পারছে।
টুম্পাঃ নতুন একটা জীবন পেলেন। বুকের অভ্যন-রে কারোর জন্য টান অনুভব করেননি নতুন করে?
অনিতাঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যাঁ টান অনুভব করেছি। আবারো ভালবাসা আছড়ে পড়তে চেয়েছে মনেপ্রানে। কল্পনায় এঁকেছি সংসারের স্কেচ, কিন'। কিন' তখনই সময় শেষ হয়ে গেল আমার, যখন নতুন করে শুরু করতে চাইলাম। [কিছুক্ষণ চুপ থেকে’ আমার পাশের ফ্ল্যাটে বাদল নামের একজন নিঃসঙ্গ থাকে। ও যখন সঙ্গ চাইলো, যখন ওকে সঙ্গ দিতে চাইলাম ঠিক তখন জানলাম আমি এইচআইভি পজেটিভ।
.......................................................................................
সন্ধি 18.
চরিত্রঃ বাদল, অনিতা
স'ানঃ মুখোমুখি দুই ফ্ল্যাট
সময়ঃ রাত
(অনিতা শুয়ে আছে। চূড়ান- অসুস' শরীর। দেখলেই বোঝায যায়। পাশে বেজেই চলেছে টেলিফোন। হাত বাড়িয়ে অবশেষে কষ্টসহ রিসিভার কানে তুললো অনিতা। বাদলেও কষ্ট অস্পষ্ট। জড়ানো।)
অনিতাঃ হ্যালো
বাদলঃ হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ..
অনিতাঃ থ্যাংকিউ
বাদলঃ বত্রিশ পুরন করে আজ তুমি নারী। অভিনন্দন।
অনিতা, আমার অপূর্নতা
নাই বলতে পারো, নারী ছাড়া আমার সময় শেষ। চলে যাবার আগে তোমাকে দেখতে চাই কিছুক্সণ। সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে যেতে ভাল লাগবে আমার। বিশ্বাস করো অনিতা ..আঁ.. (দ্রুত দু’হাত মাথা
চেপে ধরলো বাদল। রিসিভার
পড়ে গেল হাত থেকে। আঁ.. বলে
আবারো চিৎকার করলো বাদল। শরীরের সমস-
শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো অনিতা। টলমল করতে করতে দরজায়। দু’বার বাদল বলে ডাকলো। কলিং বেল টিপলো কয়েকবার। ভেতর থেকে কোন রিটার্ন নেই। অনিতা ফিরে গেল।
.......................................................................................
চরিত্রঃ পুলিশ, বিভা, টুম্পা
স'ানঃ রাত্রি নিবাস/
সময়ঃ সকাল
(স্কুলে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে বিভা। সেলফোন বাজলে দেখলো অচেনা নাম্বার। রিসিভ করলো)
পুলিশঃ বিভা বললেন?
বিভাঃ জ্বি, কে বলছেন প্লিজ।
পুলিশঃ বাদল নামের কাউকে চেনেন?
বিভাঃ জ্বি।
পুলিশঃ বাদল সাহেব আপনার কে হোন?
বিভাঃ পরিচিত। ঠিক পরিচিত
না, বন্ধু।
পুলিশঃ বাদল সাহেবের সাথে আপনার কি কোন চুক্তি আছে?
বিভাঃ হ্যাঁ। কেন বলুনতোঃ
আপনি আসলে কে?
পুলিশঃ বাদল সাহেবের পাশের ফ্ল্যাটে অনিতা নামের একজন থাকেন। আপনি কি অনিতা ম্যামকে চেনেন?
বিভাঃ ঠিক চিনিনা। তবে নাম
শুনেছি।
পুলিশঃ গত রাতে অনিতা ম্যাডাম মারা গেছেন।
বিভাঃ সেটা আমাকে জানিয়ে লাভ কি?
(একই সময়ে অপর এক পুলিশ টুম্পাকে একই ভাবে জানাবে অনিতা- বাদলের
মৃত্যু সংবাদ।)
পুলিশঃ আপনাকে জানাবার দরকার আছে। আমরা কিছুই জানিনা। আপনার থেকে কিছু তথ্য নেব। ঘন্টা খানেক পর থানায় আসবেন। আমি পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার।
বিভাঃ কিন' আমি কেন?
পুলিশঃ ও হ্যাঁ, আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছি, গত রাতে বাদল সাহেবও মারা গেছেন।
সমাপ্তিকাল
অংশু মোস্তাফিজ
বগুড়া
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন