বি ব র
বি ব র
অংশু মোস্তাফিজ
কালো এক ছায়া দেখে চমকে উঠলো রমেন। আশে পাশে কেউ নেই। ছায়া এলো কেত্থেকে? আবারো চমকে উঠলো রমেন। ছায়াটা আবার দেখলো। বালিকামুর্তি। আবারো চারদিকে তাকিয়ে দেখলো, আশে পাশে কেউ নেই। নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো রমেন, সব ঠিকঠাক। ছায়া এলো কেত্থেকে? সাতাশ জ্যৈষ্ঠ্য, গড়িয়ে আসা বেলা, পাটগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে সে। পাটগ্রাম প্রেসক্লাব,
পাটগ্রাম, লালমনিরহাট লেখা পড়ে দেখলো সে। আবারো হাটতে শুরু করলো রমেন। আশেপাশে কোন লোক নেই। একটু জোরে হাটতে শুরু করলো রমেন। ক্লানি- শরীরময়। আজ সকালে রমেন এক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল। সকালে, যখন অফিসের দিকে যাচ্ছিলো রমেন, নির্মাণাধীন
একটা বাড়ির ছাদ থেকে কিছু ভারী কাঠ পরেছিল কাঁধে। তার একটা মাথাতে আঘাত করেছে। সে যখন বিষয়টা সম্পর্কে পুরোপুরি জানলো তখন সে ক্লিনিকে। একটা মহিলা তার তত্ত্বাবধায়নে ওকে সড়ক থেকে ক্লিনিকে এনেছে বলে
তাকে জানানো হয়েছে। একজন নার্স
কিছু একটা ওয়ার্ডবুকে লিখে ক্লানি-ঝেড়ে চলে গেলেন। এবং যাবার আগে আগে বলে গেল, আপনি সেড়ে ওঠায় আমরা খুশি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে যেতে পারবেন। যাবার আগে ফোন নাম্বার রেখে যাবেন, উনি চেয়েছেন
যিনি আপনাকে এখানে এনেছিলেন। উনি আবার আসবেন বলেছেন,
ইচ্ছে করলে দেখা করে যেতে পারেন। রমেন অনেকটা পথ হেটে এসে মনে করলো, দেখা করে
আসা উচিত ছিল। কিন' ফিরে যাবার
মত ইচ্ছে হলো না আর। ক্লানি-
শরীরময়।
অফিসে না যাবার কারন উর্দ্ধোতনকে জানানো প্রয়োজন। ফোনে পয়সা নেই। রুমের বাইরে যেতে ইচ্ছে করলো না। কারো কারো ইচ্ছের চেয়ে অনিচ্ছাই বেশি, রমেন তাদের
দলে, বলেছিল হাইস্কুলের প্রেমিকা। রমেনের ধারণাও একই রকম। ট্রাঙ্ক খুলে ভদকার বোতল বের করলো সে। শেষের দিকে। অপরিচিত এলাকা। কোথায় কি পাওয়া যায় জানতে কিছুটা সময় লাগবে। দ্রুত খোঁজ নিতে হবে। মশাড়িটা টানিয়ে শুয়ে পড়লো রমেন। মশার প্রকোপ। আজ এ রুমে দ্বিতীয় দিন। আজ এ মফস্বলে দ্বিতীয় দিন রমেনের। ঘুম থেকে জেগেই পাওয়া একটা ফোনে রমেন ঐ মহিলার অভিনন্দন পায়। জানায় গতকাল তাকে সে ভর্তি করিয়েছিল ক্লিনিকে। বেশ কথা বলতে হলো মহিলার সঙ্গে। ভদ্রতা বজায় রাখা উচিত হবে। উনি সড়ক থেকে কাল অজ্ঞাত এক অজ্ঞানকে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলেন। সবশেষে সম্ভব হলে আজকেই রমেনকে বাসায় যেতে বলেছেন মহিলা। ভদ্রতা করে তাতেও রাজি হয়েছে রমেন। তিনদিন পর বিপত্তিটা ঘটলো। তার বাড়িতে গিয়ে কাঁধ ঝাঁকালো রমেন। প্রকান্ড বাড়ি। মহিলার নাম মনে করতে গিয়ে মনে হলো, তার নাম
শোনা হয়নি। না, সমস্যায়
পড়তে হলো না। অন্দরমহলের
দরজা পর্যন- পৌঁছতেই কেউ একজনকে দেখা গেল আবছা অন্ধকারে। বেশকিছু সময় রোদে হেঁটে আসার পর অন্দরমহলের কাছে এসে চোখে আবছা
দেখছে রমেন। কিছু বলার
আগে পঞ্চাশোর্ধ মহিলা এগিয়ে এসে বললেন, রমেন তো, এসো ভেতরে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ছিমছাম দ্বিতলা শাদা রঙের বাড়ি। বিশাল এড়িয়া। গাছ, পুকুর সব আছে। অন্দরমহলের ভেতরেও গাছ আছে। বনসাই আছে।
দু’একজন কাজের
লোক ছাড়া আর কাউকে দেখা গেলো না এদিকে। মহিলা চা পান করছেন। রমেনের চাতে অভ্যেস নেই। কি নাম আপনার জিজ্ঞেস করলো রমেন। ভদ্রমহিলা বললেন, অন্নপর্না দেবী। হিন্দু এ মহিলাকে মন্দ লোক বলে মনে হয়নি। ছোটসময়ের কথা মনে পড়লো,
আশ্রমের হুজুর বলেছিল, হিন্দুরা
অত ভাল মানুষ হয়না। মিথ্যে মনে
হলো রমেনের। অন্নপর্না
দেবী ভাল মানুষ। এতো বড় একটা
বাড়িতে থাকলে মানুষ এমনিতেই বড় হয়ে যায়। সমুদ্রে দাঁড়ালে মন পবিত্র হয়। ভালকথা, এবার বদলি হলে সমুদ্রের দিকে যাবার ইচ্ছে জানাতে হবে, সে মনেমনে
ভাবলো।
বাস-বে ভদ্রমহিলা কম কথা বলেন। বললেন, ভালবোধ করছো তো রমেন?
খাবে কিছু?
এখন না খেলেও রাতে খেয়ে যাবে। চা শেষ করে
আমরা ছাদে বসবো। গল্পগুজব
করবো। আশেপাশে লোক পাইনা বুঝলে। একা মানুষ। তুমি মাঝেমাঝে আসবে। ভাল লাগবে আমার। রমেন, আসবো বলে আর কিছু বললো না।
ছাদের উপরে কতক ধরণের গাছ। খরগোশ। গাছের চেয়ারে বসে ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, বাড়িটা পছন্দ
হয়েছে তোমার? দারুন, রমেনের উত্তর। অন্নপর্না দেবী বললেন,
দীপাবলীর গল্প জানো? দীপাবলীর কিছু ছাপ আমার কপাল
থেকে নেয়া বুঝলে। অদ্ভুতভাবে
একটা জীবন কাটিয়ে এলাম। দীর্ঘশ্বাস
ফেললেন তিনি। তোমাকে খবর
কি, বাড়িতে কে কে আছেন? বাড়িতে শব্দ রমেনের কাছে বেখাপ্পা লাগলো। বললো বাড়ি নেই আমার। কখনোই ছিল না। প্রশ্নবোধক চোখে একটু মুখ বেঁকালেন অন্নপর্না। রমেন তার দিকে একটু ঝুকে বললো, সুন্দর একটা
প্রফাইল জানাবো আপনাকে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করবেন না কিছু। ভদ্রমহিলা ঠিকআছে বললেন। রমেন বললো, এগার বছর বয়সে এতিমখানা থেকে পালিয়ে আসা ছেলে আমি। পরবর্তীতে টোকাইগিরি করে চলেছি অনেকদিন। পড়াশোনাটা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান- ছিল আমার সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান-। পরবর্তীতে ভদকা খাওয়া শিখে রমেন হয়েছি। এরপর বাউল হবো। অন্নপর্না দেবী বেশকিছু সময় পরে বললেন, অদ্ভুত ছেলে
তুমি, বেঁচে থাকো।
ঘুমের মধ্যে ছায়াস্বপ্নটা আবার দেখছিল রমেন। বালিকামূর্তির সেই ছাঁয়াটা, যেখানে কোন বালিকা ছিল না। রোদ, ভরদুপুর, চারদিক আশ্চর্য নিরবতা ছিল, প্রেসক্লাব, প্রেস.., ..., ... লেখা ছিল। যখন ঘুম ভাংলো, বেলা তিনটে। অফিস যাওয়া হলো না। গতকাল নতুন অফিসে জয়েন করার কথা ছিল। আজও হলো না। উর্দ্ধোতনকে কি জানানো যায়, সুবিধাজনক কিছু খুঁজে বের করার
চেষ্টা করলো রমেন। ইতোমধ্যে
একটা ফোন রমেনকে জানায়, সুমু বলছে। বললো তোমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, আর কখনো
মুখ দেখবো না আমরা। কাল বিকেলে
আমার শ্বাশুড়ীর সঙ্গে ছাদে গল্প করতে দেখেছি তোমাকে। প্রতিদিন শ্বাশুড়ীর বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় আমাকে। এ বাড়িতে আর এসো না। আমি বিব্রত হবো। ভালথেকো বললো সুমু। অনেকগুলো প্রেমিকার মুখ মনে পড়লো। হাইস্কুলের প্রেমিকারও। শেষের দিকে যে বলেছিল,
নষ্ট মানুষ তুমি। তার আগে তার গর্ভে একটা ছেলে কি মেয়ে এসেছিল। একটু পরে অন্নপর্না দেবীর ফোন, কাজ না থাকলে
বিকেলে যেতে বললেন। রমেন ঠিকআছে
বললো। ভদকা শেষ। গোটা মফস্বল ঘুরে মাত্র কিছু বাংলামদ পেল রমেন। পরদিন সকালে অফিসে গেল বদলীর আবেদন লিখে নিয়ে। অফিস রাজি হলো না। ভরদুপুরে ট্রাঙ্ক গুছিয়ে রাস-ায় নামলো রমেন। পাটগ্রাম প্রেসক্লাব,
পাটগ্রাম, লালমনিরহাট লেখা সাইনবোর্ড দেখে রমেন থকমে গেল। বোঝার চেষ্টা করলো কি পড়লো সে, পাটগ্রাম
প্রেসক্লাব, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট নাকি দৌলদিয়া প্রেসক্লাব, দৌলদিয়া, রাজবাড়ি? অন্নপর্না
দেবী রমেনের এনজিওতে গিয়ে জানতে চাইলো রমেনের চাকরি ছাড়ার কারন কি। একজন জানালেন কাহিনী অদ্ভুত। দৌলদিয়া থাকার সময় একটা কিশোরী ওর জন্য আত্মহুতি দিয়েছে। রমেন ওতে রাজি ছিল না। মেয়েটি শরীর বিক্রি করতো। বদলি নিয়ে এখানে জয়েন করতে এসেছিল। তিনদিন পর এসে জানালো,
এখানে থাকলে আরো একজন আত্মহুতি দিতে পারে। বদলি চাইলো কুয়াকাটায়। অফিস রাজি হয়নি। অন্নপর্না দেবী ফিরে গেলেন। যাবার সময় বললেন, অদ্ভুত ছেলে। পরবর্তীতে তার ছেলেবউয়ের ফোনে রমেনের নাম দেখলেন অন্নপর্না দেবী। রকমারী গাছ আর খরগোশ থাকা ছাদে গিয়ে দাঁড়ালেন অন্নপর্না দেবী। দাঁড়িয়ে থাকলেন। ফিরে এসে এই গল্পের আরো কিছু ছেড়া পাতা খুঁজলেন অন্নপর্না দেবী। ছেড়া হলেও পাঠযোগ্য পাতাগুলোয় কিছু পড়তে পারলেন না তিনি। কারন লেখাগুলো এতো ছোট ছোট আর এতো তীক্ষ্ণ তাকে চোখে ধরে না। তিনি আরো কিছুদিন অদ্ভুত ভেবে পৃষ্ঠা উল্টালেন আর দেখলেন, বেঁচে থাকার
অনুভূতিগুলো কেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আর কত মারাত্মক।
অংশু মোস্তাফিজ
পুরান বগুড়া, বগুড়া।
অন্ধকারের খোঁজখবর
শেষ দিনটা ছিল অনেক কষ্টদায়ক। আবার কবে কোথায় দেখা হবে ঠিকনাই। উদ্বিগ্ন দুজন। যতটা সম্ভব পরস্পরকে দেখে কাটালো। ভাগাভাগি করে আইসক্রিম খেলো, চুমুবিনিময় করলো। কিন্তু দিনটা সুখী নয়। বিচ্ছেদের। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার বাসে উঠে বসলো সমুদ্র। উদ্দেশ্য ময়মনসিংহ। অনার্স শেষ। ফাস্টকাস রেজাল্ট হয়েছে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। ছয় বছর আগে অদ্ভুত এক উদ্দেশ্য নিয়ে বগুড়াতে পড়তে এসেছিল সমুদ্র। তার এক নিকটআত্মীয় এখানে থেকে মাদকের ব্যবসা করেন। সমুদ্রকে তিনি আহ্বান করেছিলেন। সমুদ্র আসক্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। সে গল্প আরো অদ্ভুত। বিছানার চারপাশে বোতল ছড়ানো ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল সে। অর্ধেকটা দিন আসক্ত অবশিষ্ঠ পড়ে কাটিয়েছে। খারাপ দিন যায়নি। এভাবে কাটানো অর্ধেক যুগে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। অরনীর দেখা পাওয়া। মেয়েটি বলেছিল, তোমার সাথে যাবো আমি। একা থাকতে পারবো না। রূপবতী মেয়ে। নাচ করতে পারে। নামী এক নাচের দলের সদস্য সে। সমস্যা বলতে ভালবাসার মাখামাখি। ভাল লাগে না সমুদ্রের। বেঁচে থাকাকালীন আরো অনেকগুলো পথ মারিয়ে চলতে হয়। ভালবাসায় কেবল এতো মাখামাখি কেন? অরনী বোঝে
না। কেবল ভালবাসা চাই। সমুদ্র চলে আসার সময় অনেকণ কেঁদেছে সে। আবার কবে কোথায় দেখা হবে ঠিকনাই। ঠিকথাকলে এতোটা না কাঁদলেও চলতো। কিন্তু সমুদ্র বিয়ে নিয়ে বেশি কথা বলতে চায়নি। আগে তো ফিরে যাক। একটা কর্মসংস্থান হোক। বিয়ে এক সময় করবো এবং তোমাকেই করবো অরনীকে বুঝিয়ে বলেছে সে। অরনী তার কতটা বুঝেছে,
তার চোখমুখ দেখে সেটা বোঝা যায়না। বাস গতি বাড়িয়ে নিলো। ঘুমাবার চেষ্টা করলো সমুদ্র।
আরো এক বছরেও সমুদ্র কর্মসংস্থান ঠিক করতে পারলো না। টাকাপয়সার অভাবে আসক্তিতেও যাওয়া যায় না। বিদঘুটে দিন কাটে। এর মাঝে অরনী প্রাইমারী স্কুল শিকে নিয়োগ পেয়ে যায়। সমুদ্রকে সে আহ্বান করে। সমুদ্র রাজি হয় না। সম্মানবোধ হানা দেয়। বাবামা জানায়, পাত্রপ পছন্দ করেছে। কথাবার্তা এগুচ্ছে। অরনী বলতে পারে না, তার পছন্দ করা পুরুষ আছে যাকে সে বিয়ে করবে ঠিক করেছে। পরিবারের সাথে বিরূপসম্পর্ক ওকে একা করে রেখেছে। সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অরনী একা একা তদবিরের চেষ্টা করে, যাতে সে
ময়মনসিংহ বদলি নিয়ে যেতে পারে। তদবির করতে এসে একটা বাজে আহ্বান শোনে সে। দালাল জানায় অফিসার তাকে পছন্দ করেছেন। তিনি ইচ্ছে করলে বদলি করাতে পারবেন। বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেছেন। অরনী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সমুদ্রকে জানায় আমিই না হয় চলে আসি। স্বাস্থ্য ভালো, দিনমজুরও হতে পারো। আমি পারিচারিকা। তাতেও রাজি হয়না সমুদ্র। হাসি পায়। আবার মন খারাপ হয়।
পাড়ার বখাটে ছেলেপুলেদের লিড দিয়ে চলতে হয়। উপার্জনের বিকল্প নেই। অন্তত নিম্নমানের একটা ভদ্রোচিত কর্মসংস্থান হলেও অরনীকে ডাকা
যেত। কিন্তু না ভাগ্য তেমন হয়নি। হচ্ছেও না। অনার্সে ফার্স্টকাস কোন মূল্য দিচ্ছে না। ময়মনসিংহ শহরের উপকণ্ঠে থেকে কোন সংস্থান করা যাবে না এতটুকু
স্পষ্ট। ঢাকার দিকে
পা বাড়াতে হবে। কিংবা অন্য
কোথাও হলেও সম্ভব। পরিচিত সবাইকেই
বলা হলো। না, কোন মূল্য
আসছে না। সম্প্রতি
সিনিয়রদের বৈঠকে অনেকটা নিষিদ্ধ সমুদ্র। সবাই জানে সে বখাটেদের লিডার। গোড়া আস্টেক তরুনের ধাপ্পাবাজির টাকার একটা অংশে চলতে হয়। স্বস্থি নেই তাতে। মাঝেমাঝেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। দলের কেউ ধরা পড়লে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়। তাতে অনেক সময় বাপচাচাদের বন্ধুবান্ধবের মুখোমুখি হতে হয়। সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো নয়। পার্টি অফিস থেকে খবর আসে। ছাত্রসংগঠনের সদস্য হবার আহ্বান। ওর দল পার্টিকে ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে বলে নেতাদের ধারণা। কাজ হয় না। সমুদ্র সাড়া দেয় না। এভাবে চলে না। দ্রুত সিদ্ধান্ত তৈরী করা দরকার। এদিকে অরনীকে মানানো যাচ্ছে না। গতমাসে ওর বেতনের একটা অংশ পাঠিয়েছে সমুদ্রের হাত খরচ চালানোর
জন্য। সমুদ্র কিছু বুঝে ওঠেনা। টাকা নেয়। এবং বোঝে একটা নিশ্চিত দায়বদ্ধের মধ্যে জড়াচ্ছে সে।
সমুদ্র
যখন অরনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন আরো অন্তত দশ মাস কেটে গেছে। দশ মাসেই
সে হাতখরচের টাকা পেয়েছে। সমুদ্র জানায়, একটা সংগতি হয়েছে। টাঙ্গাইলে
একটা ছ’মিলকাম
ফার্নিচার ফ্যাক্টরীতে চাকরি পেয়েছে সে। সমান সমান
চলে যাবে মাইনে। সমুদ্র জানায় তোমাকে পেতে চাই এখন যদি তুমি চাও। দ্বিধায়
জড়ায় অরনী। কি করা ঠিক হবে তার, সময় নিয়ে চিন্তা করে। চার মাস
আগে তার বিয়ে হয়েছে তার প্রাইমারী স্কুলের পাশের বিল্ডিংয়ে যে প্রাইভেট কলেজ তার কেমিস্ট্রি
শিকের সঙ্গে। অরনী সম্মত ছিল না, কিন্তু আর পথ খুঁজে পায়নি। সমুদ্র
সাড়া দিচ্ছিলো না। তাকে জানিয়ে লাভ নেই ভেবেছিল। ব্যাংক
থেকে মাইনে তুলে টাঙ্গাইলের বাসে উঠে বসে অরনী। তারপর পনের
দিনেও ফিরে না এলে এলাকায় রাষ্ট্র হয়েছিল, তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে। কেমিস্ট্রির
টিচার যথাযথ খোঁজা, কাগজে খবর
ছাপানো, থানায় মামলাকরার
মত যা করার ছিল করেছে। লাভ হয়নি কোন। অরনী উঠেছিল
সমুদ্রের ভাড়া বাড়িতে। মাস দেড়েক ছিল। পরবর্তীতে
একদিন বাম বুকে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় সমুদ্রের। অরনীকে
পাওয়া যায় না। খবরের কাগজে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা প্ল্যান করে সমুদ্রকে খুন করেছে। এখানে একজন
নারীকে ব্যবহার করা হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। ফার্নিচার
ফ্যাক্টরীর মালিকপকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। অরনী কেবলমাত্র
একক ওয়ান্টেড নয়। কিংবা কোন নারী জড়িত সেটা সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়। কেননা এলাকার
কেউ বলতে পারেনি সমুদ্রের বাড়িতে কোন নারীকে কেউ দেখেছে কিনা। ঘটনা এ
পর্যন্তই। আর কোন গল্প তৈরী করেনি। পুলিশি
তদন্তে আসেনি কোন বাড়তি তথ্য। অরনীর পরিবারও জানেনা মেয়ে বেঁচে আছে কিনা। কেমিস্ট্রি
মাস্টারের ছেলে এবার প্রাইমারীতে ভর্তি হলো। তিনি বিয়ে
করেছিলেন আরো আগেই।
হুট করে একদিন অরনীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেটা ঘটনার দশ বছর পরে। অরনীর সঙ্গে যখন দেখা হলো, বিকেল। টাঙ্গাইল পতিতালয়। বেশি দাম দিয়ে যখন চুমকি নামের এক পতিতার ঘরে পৌঁছালাম, দেখি আমার
সামনে অরনী দাঁড়িয়ে। শিহরিত হয়ে
উঠলাম। এই মেয়েটি
হাইস্কুলে আমার বাংলা বইয়ের ভেতরে রাখা চিরকুটে বলেছিল, আমার ভালবাসার
ঘরে তোমার বসতি। মতামত জানিও। পরদিন কমনরুম থেকে ডেকে নিয়ে ওকে বলেছিলাম, তোমার ভালবাসার
ঘর দেখতে চাই। সিদ্ধান্ত
নিতে পারছিলাম না, চলে যাবো নাকি থেকে যাবো। পরদিন সকালে ওকে শেষ প্রশ্ন করেছিলাম, পিস্তল পেলে
কোথায়? ও বলেছিল, আবার এসো বলবো। পরদিন টাঙ্গাইল পতিতালয়ে গিয়ে অরনীকে পাইনি। তারপর দিন, আরো কয়েকদিন পর, আর কোনদিনই অরনীর দেখা পাইনি। ওর সঙ্গে দেখা হওয়া প্রয়োজন। ওর ভালবাসার ঘর আমার দেখা হয়নি। দেখা প্রয়োজন। প্রজেক্টের চাকরি করি। এ জেলায় ও জেলায় ঘুরতে হয়। আমি খবর রাখি। কোথাও কোন পতিতালয়ের খবর পেলে এগিয়ে যাই। কোথাও কোন পতিতার খবর পেলেও এগিয়ে যাই। লোপা নামের কোন এক পতিতার খবরে গিয়ে হয়তো অরনীর দেখা পাবো। অরনী হয়তো এখন চুমকি থেকে লোপা হয়েছে।
অংশু মোস্তাফিজ
পুরান বগুড়া, বগুড়া।
শ্যাডো
আজ তোর জন্য অশ্রুবিন্দু ছাড়া আর দেবার মত
কিছুই নাই৷ গত রাতে লোকটা যখন সঙ্গমে চূড়ান্ত আহ্বান করলো, আমি নিথর হয়ে
পরে ছিলাম৷ অসাড় দেহে অনুভূতির স্বাদ জন্মে না৷ জন্মেওনি৷ অনুভূতির
প্রজাপতিগুলো উড়ে উড়ে চলে গিয়েছিল গত ফাল্গুনের শেষ বুধবারে৷ শেষ বিকেলে৷
তোর দিকে৷ ক্ষমা চাইবার মত দৃষ্টতা দেখাবার মত শক্তিও আজ নেই৷ আত্মপক্ষ
সমর্থনে এটুকু বলতে পারবো, মায়ের মরা মুখ দেখবার চেয়ে তোর বিষন্ন মুখ বড়
করে দেখতে পারিনি! বলতেই হলো কবুল৷ কবুল৷ কবুল৷ ধরেনে এটা'ই আমার
আত্মহত্যা৷
কিন্তু তুই এমন পাক্কা অভিনয় কিভাবে করতে পারলি? কলেজে একবার নাটক করতে গিয়ে রির্হাসেলে এক পার্ট সাতবারেও করতে পারছিলি না বলে তোকে চড় মেরেছিলাম, মনে পড়ে? সেই তুই কি করে বিয়ের আসরে এতোটা কাছে এসে বললি, কাঁদছো কেন টুম্পা, বেশ সেজেছো আজ৷ এতো সুন্দর তোমাকে কখনো দেখিনি৷ তোমার স্বামী খুব ভালো৷ নিশ্চিত সুখী হবে'৷ শেষ বারের মত আমার চোখে তাকিয়ে যখন চলে যাচ্ছিলি বুঝাতে পারবো না তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিল হৃদয় টুকরো টুকরো হবার৷ তোর মুখ থেকে বলা তুমি শব্দটা আমার তেইশ বছরের সব অর্জনকে এক নিমিষের মত সময়ে তুচ্ছ করে দিলো৷ তুই আমাকে তুমি করে বললি কেন? আমি জানি ফুল আর কাটা এখন তোর কাছে নিটোল৷ তোর মন ভাঙ্গার খন্ড খন্ড চিত্র আমাকে বারংবার সম্পূর্ণ প্রতারকের স্বীকৃতি দিচ্ছে৷ আমার নিজেই নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে৷ তবু ঐ বিশাল আকাশটার দিকে তাকা, আকাশসম একটা পাথর বুকে চেপে শ্বাস নিচ্ছি৷ আর একবার যদি আমাকে তুমি করে বলিস, তবু যদি কোনভাবে অস্বাভাবিক হতে চেষ্টা করিস- তবে নিশ্চিত থাক, আমার কাছে আত্মহত্যা করবার এর চেয়ে বড় কারনের দরকার হবে না৷ তাতে আরো একবার দূঃখ পাবি৷ আমার বিয়ের কষ্ট+ আত্মহত্যার কষ্ট মিলে যদি সুখ পেতে চাস, তবে তোকে সে সুখ আমি দেবো৷ সবইতো দিয়েছি, নিঃশ্বাসে আর কি আসে যায়৷ কিন্তু আমি, আমার দিকে তাকা, আত্মহত্যা করেতো আমি সুখী হতে পারবো না৷ যেভাবেই হোক তবু তোকে দেখতে পাবো- এমন একটা আশা নিয়ে বাঁচতে চাওয়া৷ আমাকে মরতে বাধ্য করিসনা নিজেকে কষ্ট দিয়ে৷ এতোদিন তোকে যা দিয়েছি আজ তার বিনিময় চাচ্ছি৷ তু্ই স্বাভাবিক থাক আমি প্রাপ্তি স্বীকার বোধ করবো৷
বিয়ের পরদিন টুম্পা আমাকে এ চিঠি লিখেছে৷ টুম্পার লেখা ছয় পৃষ্ঠার চিঠির প্রথম পৃষ্ঠা এটুকু অংশ৷ শিল্পের মত সুন্দর করে চিঠি লিখতো টুম্পা৷
অসংখ্য মানুষের ভালো বন্ধু আমি৷ ভালো বন্ধু হবার সবচেয়ে সহজ উপাই ভালো শ্রোতা হবার৷ মানুষের শোনার চেয়ে বলার ইচ্ছা প্রবল৷ এ ইচ্ছাকে সমর্থন দিলে অচেনা মানুষও বন্ধু হয়ে ওঠে৷ ভালো শ্রোতা হবার সুবাদে অসংখ্য মানুষের জীবনের ট্রাজেডি আমি জানি৷ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, প্রত্যকটা মানুষের জীবনে কোন না কোন ভাবে ট্রাজেডি রয়েছে৷ আমার দূর্ভাগ্য আমার কোন বন্ধু নাই৷ আমি অনেকের বন্ধু হলেও শেষ পর্যন্ত আমার বন্ধু হয়ে টিকে থাকেনি কেউ৷ সম্ভবত ভালো মানুষ আমি নই৷ অন্যরা৷ এনিওয়ে, জীবনের কোন একটা অংশে কোমায় যেতে হয়েছিল আমাকে৷ অতি স্বজন ছাড়া এই তথ্য আর কেউ জানে না৷ সিরিঞ্জ-প্যাথেডিন-মরফিন-মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র- হাসপাতাল- কোমা, শব্দগুলো আমার সাথে জড়িত শুনলেও পরিচিত কেউ বিশ্বাস করবে না৷ টুম্পা খুব ভালো করে এই শব্দগুলোর প্রভাব দেখেছিল আমার উপর৷ তাই বিয়ের পরদির ওর ছয় পৃষ্ঠার চিঠিতে বারবার অাঁতকে ওঠা৷
তাম্মির যেদিন বিয়ে হয়ে গেল সেদিন স্বাভাবিক ছিলাম৷ বিয়ের পরের দিন, তার পরের দিন, তার পরের দিন আমি ক্রমাগত হারাতে থাকি আমার থেকে৷ তাম্মি আমার সমমান থেকে হুট করে কেট মিডলটন হয়ে ওঠে আর আমি হই দেউলিয়া৷ ওকে খুঁজতে খুঁজতে আমার অবশিষ্ঠ অংশটুকুও চলে যায়৷ একসময় হারায় শেষ সম্পদ- প্রাণশক্তি৷
কিন্তু তুই এমন পাক্কা অভিনয় কিভাবে করতে পারলি? কলেজে একবার নাটক করতে গিয়ে রির্হাসেলে এক পার্ট সাতবারেও করতে পারছিলি না বলে তোকে চড় মেরেছিলাম, মনে পড়ে? সেই তুই কি করে বিয়ের আসরে এতোটা কাছে এসে বললি, কাঁদছো কেন টুম্পা, বেশ সেজেছো আজ৷ এতো সুন্দর তোমাকে কখনো দেখিনি৷ তোমার স্বামী খুব ভালো৷ নিশ্চিত সুখী হবে'৷ শেষ বারের মত আমার চোখে তাকিয়ে যখন চলে যাচ্ছিলি বুঝাতে পারবো না তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিল হৃদয় টুকরো টুকরো হবার৷ তোর মুখ থেকে বলা তুমি শব্দটা আমার তেইশ বছরের সব অর্জনকে এক নিমিষের মত সময়ে তুচ্ছ করে দিলো৷ তুই আমাকে তুমি করে বললি কেন? আমি জানি ফুল আর কাটা এখন তোর কাছে নিটোল৷ তোর মন ভাঙ্গার খন্ড খন্ড চিত্র আমাকে বারংবার সম্পূর্ণ প্রতারকের স্বীকৃতি দিচ্ছে৷ আমার নিজেই নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে৷ তবু ঐ বিশাল আকাশটার দিকে তাকা, আকাশসম একটা পাথর বুকে চেপে শ্বাস নিচ্ছি৷ আর একবার যদি আমাকে তুমি করে বলিস, তবু যদি কোনভাবে অস্বাভাবিক হতে চেষ্টা করিস- তবে নিশ্চিত থাক, আমার কাছে আত্মহত্যা করবার এর চেয়ে বড় কারনের দরকার হবে না৷ তাতে আরো একবার দূঃখ পাবি৷ আমার বিয়ের কষ্ট+ আত্মহত্যার কষ্ট মিলে যদি সুখ পেতে চাস, তবে তোকে সে সুখ আমি দেবো৷ সবইতো দিয়েছি, নিঃশ্বাসে আর কি আসে যায়৷ কিন্তু আমি, আমার দিকে তাকা, আত্মহত্যা করেতো আমি সুখী হতে পারবো না৷ যেভাবেই হোক তবু তোকে দেখতে পাবো- এমন একটা আশা নিয়ে বাঁচতে চাওয়া৷ আমাকে মরতে বাধ্য করিসনা নিজেকে কষ্ট দিয়ে৷ এতোদিন তোকে যা দিয়েছি আজ তার বিনিময় চাচ্ছি৷ তু্ই স্বাভাবিক থাক আমি প্রাপ্তি স্বীকার বোধ করবো৷
বিয়ের পরদিন টুম্পা আমাকে এ চিঠি লিখেছে৷ টুম্পার লেখা ছয় পৃষ্ঠার চিঠির প্রথম পৃষ্ঠা এটুকু অংশ৷ শিল্পের মত সুন্দর করে চিঠি লিখতো টুম্পা৷
অসংখ্য মানুষের ভালো বন্ধু আমি৷ ভালো বন্ধু হবার সবচেয়ে সহজ উপাই ভালো শ্রোতা হবার৷ মানুষের শোনার চেয়ে বলার ইচ্ছা প্রবল৷ এ ইচ্ছাকে সমর্থন দিলে অচেনা মানুষও বন্ধু হয়ে ওঠে৷ ভালো শ্রোতা হবার সুবাদে অসংখ্য মানুষের জীবনের ট্রাজেডি আমি জানি৷ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, প্রত্যকটা মানুষের জীবনে কোন না কোন ভাবে ট্রাজেডি রয়েছে৷ আমার দূর্ভাগ্য আমার কোন বন্ধু নাই৷ আমি অনেকের বন্ধু হলেও শেষ পর্যন্ত আমার বন্ধু হয়ে টিকে থাকেনি কেউ৷ সম্ভবত ভালো মানুষ আমি নই৷ অন্যরা৷ এনিওয়ে, জীবনের কোন একটা অংশে কোমায় যেতে হয়েছিল আমাকে৷ অতি স্বজন ছাড়া এই তথ্য আর কেউ জানে না৷ সিরিঞ্জ-প্যাথেডিন-মরফিন-মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র- হাসপাতাল- কোমা, শব্দগুলো আমার সাথে জড়িত শুনলেও পরিচিত কেউ বিশ্বাস করবে না৷ টুম্পা খুব ভালো করে এই শব্দগুলোর প্রভাব দেখেছিল আমার উপর৷ তাই বিয়ের পরদির ওর ছয় পৃষ্ঠার চিঠিতে বারবার অাঁতকে ওঠা৷
তাম্মির যেদিন বিয়ে হয়ে গেল সেদিন স্বাভাবিক ছিলাম৷ বিয়ের পরের দিন, তার পরের দিন, তার পরের দিন আমি ক্রমাগত হারাতে থাকি আমার থেকে৷ তাম্মি আমার সমমান থেকে হুট করে কেট মিডলটন হয়ে ওঠে আর আমি হই দেউলিয়া৷ ওকে খুঁজতে খুঁজতে আমার অবশিষ্ঠ অংশটুকুও চলে যায়৷ একসময় হারায় শেষ সম্পদ- প্রাণশক্তি৷
বিয়ের আগেরদিন তাম্মি জানতে পেরেছিলো,
কাল ওর বিয়ে৷ আমরা সেদিনও শেষ দুপুর পর্যন্ত পাশাপাশি বসেছিলাম৷ বদল করে
আইসক্রিম খেয়েছি৷ তাম্মি আবিস্কার করলো আমার একটা দাড়ি পেকে গেছে৷ তাম্মি
দ্রুত বিয়ের তাগাদা দিলে আমি আরো সময় চেয়ে নিলাম৷ তখনো এসএসসি'র রেজাল্ট
হয়নি ওর৷ সন্ধ্যায় ঘুম থেকে জেগে দেখি ৮৭ টা মিসকল৷ কলব্যাক করলে আহত
কন্ঠে তাম্মি জানালো, কাল ওর বিয়ে৷ আমি রাজি থাকলে রাতে পালিয়ে যেতে চায়৷
অনেকক্ষণ তাম্মি আমাকে বুঝাতে চেয়েছে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত কষ্টসমগ্রতার
কথা৷ তাম্মির কথাগুলোকে মজা মনে করে আমি হেসেছি৷ আমার অবিশ্বাসের বোধ
ঠিকঠাক পরদিন টর্ণেডো হয়ে আঘাত করলো বাম বুকে৷ বাস্তববাদী মানুষ আমি৷
তাম্মিকে কোনভাবেই অবাস্তব ভাবতে পারিনি৷ তাম্মি আমার জীবনে, আমার সময়ে
এতোটা প্রভাব ফেলেছিল যে ওর বিচ্ছেদ মেনে নেয়া অসম্ভব ছিলো আমার জন্য৷
আমার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তাম্মির ছোঁয়া ছিলো৷ কোন ভাবেই মুছতে
পারিনি ওর স্পর্শ৷ রুচিহীন- ঘুমহীন শরীর নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে নিজের
ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম৷ মেজাজ পাল্টে গেল৷ সবার সাথে বাজে আচরণ
করতে শুরু করলাম৷ হ্রাস পেল সহ্য ক্ষমতা৷ এমন সময় এলাকার পরিচিত একজন
আমাকে গাঁজা অফার করলো৷ আর ফিরে আসা হলো না৷ ফেন্সিডিল থেকে মরফিন আমার
কাছে তাম্মির এ্যাম্বাসেডর হয়ে দাঁড়ালো৷ এভাবে চললো কয়েক মাস৷ অতঃপর
হাসপাতাল, দেড় দিনের কোমা থেকে উঠে এসেও নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি৷
পরিচিত / স্বজনরা আমার উপর অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো৷ সবার কাছে আমি হলাম বিরক্তির
কারন৷ এমন সময় টুম্পা আমার উপর একটা প্রভাব ফেললো৷ দিলো ভালবাসার ছায়া৷
টুম্পা আমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র৷ পাড়ার মেয়ে৷ একই সাথে পড়ার সুবাদে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মত৷ এক সময় টুম্পাকে সম্বোধন করতাম তুমি বলে, টুম্পা বলতো তুই করে৷ পরে আর তুমি থাকেনি৷ বয়সে বড় বলে টুম্পা আমাকে সব সময় হেল্প করতো৷ তাম্মির ব্যাপারেও অনেক হেল্প পেয়েছি ওর থেকে৷ টুম্পার প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থেকেছি৷ ওর সব কথা মানার চেষ্টা করেছি৷ এই সুযোগটাই নিলো টুম্পা৷ দিনের পর দিন ওর বলয়ে আমাকে প্রবেশ করালো৷ অনেক বেশি সময় দিলো৷ ওর প্রতি আনুগত্য বাড়াতে শারিরীক সম্পর্কেরও সুযোগ দিলো৷ সব মিলিয়ে টুম্পার কারিশম্যাটিক ভালবাসা আমাকে ফিরে আসার একটা অবস্থানে দাঁড় করালো৷ এই সুযোগে আত্মীয় স্বজন আমাকে ভর্তি করালো মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে৷ বছর দেড়েকের ঐ ঝড় থামলো অবশেষে৷ আমি আবার আমাকে ফিরে পেলাম৷ তাম্মিকে ভুলতে পারিনি তখনো৷ হয়তো পারবোনা এ জীবনে৷ তবু স্বস্তি- তাম্মির শ্যাডো হয়ে দাঁড়ালো টুম্পা৷ টুম্পার সাথে আমার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক গড়িয়েছে বছর তিনেক৷ টুম্পা কখনোই তাম্মির মত ভালবাসতে পারেনি৷ তাম্মির সরলতা ছুঁতে পারেনি৷ কিম্বা পেরেছিল, আমার সেটা মনে হয়নি৷ আমিও টুম্পাকে সেভাবে ভালবাসতে পারিনি৷ টুম্পার চলে যাওয়া যে আমার উপর প্রভাব ফেলেনি তা নয়৷ আমি তখনো হাত বাড়িয়েছিলাম, ভদকার বোতলের দিকে৷ কিন্তু পারিনি৷ এক ঢোক ভদকা মুখে নিয়ে দেখতে পেয়েছি টুম্পার আত্মহত্যা করা লাশের প্রতিচ্ছবি৷ আর পারিনি৷ তাম্মি- টুম্পার এলাকাটা বড্ড স্মৃতির ধারক হলো আমার জন্য৷ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে আর নয়৷ পা বাড়ালাম শহরের দিকে৷ যেখানে তাম্মি নেই৷ নেই টুম্পা৷
টুম্পা আমার চেয়ে এক বছরের সিনিয়র৷ পাড়ার মেয়ে৷ একই সাথে পড়ার সুবাদে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মত৷ এক সময় টুম্পাকে সম্বোধন করতাম তুমি বলে, টুম্পা বলতো তুই করে৷ পরে আর তুমি থাকেনি৷ বয়সে বড় বলে টুম্পা আমাকে সব সময় হেল্প করতো৷ তাম্মির ব্যাপারেও অনেক হেল্প পেয়েছি ওর থেকে৷ টুম্পার প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থেকেছি৷ ওর সব কথা মানার চেষ্টা করেছি৷ এই সুযোগটাই নিলো টুম্পা৷ দিনের পর দিন ওর বলয়ে আমাকে প্রবেশ করালো৷ অনেক বেশি সময় দিলো৷ ওর প্রতি আনুগত্য বাড়াতে শারিরীক সম্পর্কেরও সুযোগ দিলো৷ সব মিলিয়ে টুম্পার কারিশম্যাটিক ভালবাসা আমাকে ফিরে আসার একটা অবস্থানে দাঁড় করালো৷ এই সুযোগে আত্মীয় স্বজন আমাকে ভর্তি করালো মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে৷ বছর দেড়েকের ঐ ঝড় থামলো অবশেষে৷ আমি আবার আমাকে ফিরে পেলাম৷ তাম্মিকে ভুলতে পারিনি তখনো৷ হয়তো পারবোনা এ জীবনে৷ তবু স্বস্তি- তাম্মির শ্যাডো হয়ে দাঁড়ালো টুম্পা৷ টুম্পার সাথে আমার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক গড়িয়েছে বছর তিনেক৷ টুম্পা কখনোই তাম্মির মত ভালবাসতে পারেনি৷ তাম্মির সরলতা ছুঁতে পারেনি৷ কিম্বা পেরেছিল, আমার সেটা মনে হয়নি৷ আমিও টুম্পাকে সেভাবে ভালবাসতে পারিনি৷ টুম্পার চলে যাওয়া যে আমার উপর প্রভাব ফেলেনি তা নয়৷ আমি তখনো হাত বাড়িয়েছিলাম, ভদকার বোতলের দিকে৷ কিন্তু পারিনি৷ এক ঢোক ভদকা মুখে নিয়ে দেখতে পেয়েছি টুম্পার আত্মহত্যা করা লাশের প্রতিচ্ছবি৷ আর পারিনি৷ তাম্মি- টুম্পার এলাকাটা বড্ড স্মৃতির ধারক হলো আমার জন্য৷ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে আর নয়৷ পা বাড়ালাম শহরের দিকে৷ যেখানে তাম্মি নেই৷ নেই টুম্পা৷
কর্ণেল লিউ
কর্ণেল লিও আমার ছাত্র। ওয়ান ইলেভেন অর্থাৎ এগারোই জানুয়ারি ২০০৭ সালে ওর সাথে প্রথম দেখা। রেল লাইনের ধারে, পান সিগারেটের দোকানে। জীর্ন মলিন চেহারা, উসকো খুসকো লোম, মুখ ভর্তি মায়া। পরবর্তীতে জীবনযাপন শিখিয়েছিলাম বলে ও আমার ছাত্র। একটা বিড়ালের কথা বলছি। কর্ণেল লিও নাম রেখেছি আমি।
লিওকে পানের দোকানটা থেকে ধরে আনার দিনেই আমাদের ভাবের শুর্ব। এক ঘণ্টার মধ্যেই লিও ঘরের মেঝে ছেড়ে আমার বিছানায়, আমার শুয়ে থাকা বুকে উঠে বসেছিল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকে ওঠার সাহস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার আগেই লিও বলেছিল, ‘ভালবাসলে ছাড় দিয়ে যেতে হয়’। আমি অবাক, বলে কি সে! তারপর লিও আর কখনো কথা বলেনি। প্রয়োজনে তাকিয়েছে আর কেবল মিউ মিউ করেছে। আমি ঘড়ির কাঁটা ধরে বুঝে নিয়েছি ওর সন্ধ্যাকালীন মিউ মিউ মানে এখন ঘুম পেয়েছে।
লিওকে পানের দোকানটা থেকে ধরে আনার দিনেই আমাদের ভাবের শুর্ব। এক ঘণ্টার মধ্যেই লিও ঘরের মেঝে ছেড়ে আমার বিছানায়, আমার শুয়ে থাকা বুকে উঠে বসেছিল। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকে ওঠার সাহস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার আগেই লিও বলেছিল, ‘ভালবাসলে ছাড় দিয়ে যেতে হয়’। আমি অবাক, বলে কি সে! তারপর লিও আর কখনো কথা বলেনি। প্রয়োজনে তাকিয়েছে আর কেবল মিউ মিউ করেছে। আমি ঘড়ির কাঁটা ধরে বুঝে নিয়েছি ওর সন্ধ্যাকালীন মিউ মিউ মানে এখন ঘুম পেয়েছে।
আমার মহাভদ্র বিড়ালের বাচ্চাটি বড্ড ভীতু। ওর সমবয়সী বেড়ালের বাচ্চাদের ভয় করে। টিকটিকি ধরে খেলেও ভয় করে ইঁদুরকে। আয়নার সামনে দাঁড় করালে নিজেকে দেখেও ভয় করে। কেবল ভয় করে না আমাকে। কম্পিউটারে বসেছি, তো লিও এসে বসে পরে কোলের উপর। চোখের দিকে তাকিয়ে মিউ মিউ করে। ঘুমোচ্ছি তো পা থেকে বুক বেয়ে গলার কাছে বসে। চুম্বন করতে আসে মুখে। সবে রান্না করেছি তো পাতিলে মুখ দিয়ে আমার আগেই নিতে চায় তরকারির স্বাদ। আমি বলি, লিও এসব করে না। লিও বলে, মিউ মিউ। ভালবাসায় ছাড় দিয়ে যাই। আর লিও যখন আমার পায়ের পাশ দিয়ে হেটে যায়, ওকে আস্ত একটা রোবটের বাচ্চা বলে মনে হয়। লিওকে নিয়ে আরো অনেক কথাই বলতে পারি। যেমন রাস্তায় বের্বলেই ওকে কেউ না কেউ ধরে নিয়ে যেত। পাড়াশুদ্ধ খুঁজে বের করতাম। দু’তিন দিন পর আমাকে দেখলেই দৌড়ে আসতো, পায়ে লুটোপুটি খেত। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতাম অনেকৰণ। পরবর্তীতে লিওকে অনেককিছুই শিখিয়েছিলাম। যেমন, নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়া, খেতে বললে খেয়ে আসা, ঘুমোতে বললে শুতে যাওয়া। এমনকি সকাল দশটায় আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়া। লিও একবার হারিয়ে গেল। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজলাম। পেলাম না। এলাকায় মাইকিং করার জন্য লোক ঠিক করলাম। সতের দিন পর এক বিকালে রেল লাইনে হাটার সময় লৰ্য করি লিও আমার সাথে হাটছে। মুখ ভর্তি বিষন্নতা। জীর্ন মলিন চেহারা, উসকো খুসকো লোম, মুখ ভর্তি মায়া। ওকে দেখে কান্না পেয়েছিল আমার। এক সময় দেখি ওর চোখেও জল। পাড়ার এক ছেলে অন্য পাড়ার একজনের কাছে লিওকে বিশ টাকা দিয়ে বিক্রিও করেছিল। সেবার ফিরিয়ে আনার ঘটনাও বিচিত্র। এভাবেই লিও আমার সাথে ছিল দেড় বছর। একসময় বাড়ির বাইরে যাওয়া ছেড়ে দেয় লিও। তারপরেও আবার একদিন হারিয়ে যায় সে। দুই বছর খুঁজেছি। শুর্বর দিকে ওকে নিয়ে বেশ দুঃস্বপ্ন দেখতাম। কিছু দুর্বৃত্ত লিওকে কেটে টুকরো টুকরো করে খাচ্ছে, কারা যেন ওর রূপবান মুখে অ্যাসিড ছুঁয়ে পালাচ্ছে। আমি কোনভাবে বাঁচাতে পারছি না লিওকে। আঁতকে উঠতাম লিওয়ের বিবর্ণ পরিণতির কথা ভেবে। এবার বছরের শুর্বর দিনে আমি আরেকটি বিড়ালের বাচ্চা বাড়িতে এনেছি। পনের দিনেও ও সাহস করে আমার বুকে উঠে বসেনি। বলেনি ‘ভালবাসলে ছাড় দিয়ে যেতে হয়’। আমার মন খারাপ। রেল লাইনে হাঁটছি। হুট করে এক সময় মন ভালো হয়ে গেলো, যখন দেখলাম দুই বছর আগে হারিয়ে যাওয়া কর্ণেল লিউ আমার পাশে কখন থেকে হাটছে। সেই চেহারা। যেন ঠিক একটা শাদামুখো রোবটের বাচ্চা।
অংশু মোস্তাফিজ
পুরান বগুড়া, বগুড়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন