শনিবার, ১০ মে, ২০১৪

নাম ঠিক হয়নি

অংশু মোস্তাফিজ

ছেলের লাশ কাঁধে নেবার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলাম। কিছু টাকাও গুছিয়ে রেখেছিলাম জানাযা পরবর্তী খরচের জন্য। বেচে গেছি, কোন টাকা লাগেনি। হাড্ডি মাংসগুলো কুড়িয়ে নিয়ে গেছে পুলিশ, জল্লাদ পুতে দিয়েছে।’
দু'টো সিগারেট জ্বালিয়ে একটা এগিয়ে দিলো তারিক।
‘এসব কি বলছেন?’
চোখমুখ মুছে গামছা রাখতে রাখতে কাঁধ বাঁকিয়ে সিগারেট নিলেন তিনি।
‘হ্যাঁ, গল্পই তো বলছি। সত্য গল্প। নিজের গল্প। আর আমার ছেলের গল্প। শুনতে না চাইলে বলবো না। রাজা রানীর গল্প শুনবেন?’
তারিক বললো, ‘না কাকা, বিষয়টা ওরকম নয়, আপনার বলা শব্দগুলোয় কেবল আতঙ্ক। তাই বলছিলাম। গল্প বলেন, আজকে নিজেরটাই বলেন, ভাল লাগলে আরেকদিন রাজা রানীরটা শুনতে ডাকবো। চলেন, তার আগে চা খেয়ে নিই। গুর দিয়ে বানানো চা পাওয়া যায়, সেখানে চলেন।’
কাকা উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, ‘চা তো ছেড়ে আসলাম, এদিকে আর গুরের চা নাই।’
তারিক বললো, ‘ফিরে যান।’
বিএল কলেজের সামনে থেকে মোড় ঘুরলো রিকশা।  
তার সাথে দেখা রূপসা সেতুর নিচে। এরশাদ শিকদারের খাতিরে তার সাথে পরিচয়। সেতুর পূর্ব এলাকায় থাকা তারিক পশ্চিম পাশে গিয়ে তিনশ’ টাকা দিয়ে চার ঘণ্টার জন্য রিকশা ভাড়া করেছে।
বাড়ির নাম স্বর্ণকমল। ফলকের পাশে দাঁড়িয়ে তারিক এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো, বাড়ির তুলনায় নামের আলো বেশি। পরিচয়পত্র দেখিয়েও ভেতরে ঢোকা গেল না। ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল, জনাব শিকদার সাহেবের এই বাড়িটি দেখার। তার গল্প ছিল রোমাঞ্চকর সহিংসতার। সে সময় এরশাদ শিকদারের আপডেট তথ্য নিয়ে বাজারে পুস্তিকা পাওয়া যেত। তার দেয়ালের ভেতরে বাঙ্কার থাকার কাহিনী রোমাঞ্চিত করেছে। মনে হয়েছিল একবার দেখে আসি। আজ কাছাকাছি এসেও বাঙ্কার দেখা হলো না।
চাচা, চালিয়ে যান, আপনার যে দিক ইচ্ছা করে।
পেডেলে পা রাখলেন চাচা। ছয় বছর পর খুলনা এলো তারিক। ছক কষে নিচ্ছে সে, কার কার সাথে দেখা করা যায়, কার সাথে আগে, খুলনায় কি ওর ভাল কোন বন্ধু ছিল? ‘ধুর!’, বললো তারিক। তার বন্ধুই কখনো ছিল না। ভাল বন্ধু তো নয়’ই। কাল বাগেরহাট যেতে হবে। খান জাহান আলী মাজারের কুমিরকে আগেরবার সে বলে গেছে, ‘আবার দেখা হবে’।
উল্কা সিনেমা হলের সামনে রিকশা দাড় করালো পুলিশ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লোকটিকে গামছা দিয়ে বেধে ফেললো। তারিক বললো, ‘ঘটনা কি?’ ‘ঘটনা আছে, আপনি নামেন’, ওর দিকে এগিয়ে এলো একজন। খালি রিকশা ডেকে তুলে দিয়ে বললো, ‘যান, এই শুয়োর জঙ্গি, বোমা বানায়, আপনি যান, কোথায় যাবেন?’
(লেখা চলছে)

কোন মন্তব্য নেই: