মুক্তমত


এই নষ্ট হয়ে যাওয়া সংস্কৃতির দেশে কিরূপে বাঁচিয়া থাকিব, ভাবিয়া কূল করিতে পারিতেছি না

এই নষ্ট হয়ে যাওয়া সংস্কৃতির দেশে কিরূপে বাঁচিয়া থাকিব, ভাবিয়া কূল করিতে পারিতেছি না,’ শত বর্ষ আগে সভ্যতার সংকট লিখে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সময়ের হলে তাই বলতেন। কিন্তু তিনি দেখতেন, তার ভাবনা ও কূল-কিনারার কোন ভবিষ্যৎ নেই। তার বক্তব্যের ঝড় দেশময় কিংবা প্রয়োজনীয় কোন কোন সংঘে থরোথরো কাঁপন তুলছে না। কেননা প্রয়োজনীয় সংঘের অধিকর্তারা সংস্কৃতির কৃতিগুলো ছিনতাইয়ে সর্বাঙ্গীন নিয়োজিত হয়ে ও যুদ্ধে জিতে নিজেরা হচ্ছেন তাৎক্ষণিক অমর, আর তাদের মায়েদেরই লক্ষ্মী জ্ঞান করে সংবর্ধণা দিচ্ছে বিভিন্ন উপসংঘ ও সংস্কৃতিবানরা। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লক্ষ্মী ও সরস্বতীর ছেলেদের কীর্তিকলাপ নিয়ে দীর্ঘতর প্রবন্ধটি লিখতে যুগান্তর কাল অতিবাহিত করতেন। ধরে নিই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈত্রিক ভিটা পড়েছে আমাদের কোন নূর হোসেন কিংবা যথাযোগ্য ইত্যাদিদের রিয়েল এস্টেট এলাকায়। সেক্ষেত্রে তার এতো বছরের জমি রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর তিনি লিখার মত সময় বের করতেন। বলা হতে পারে, নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সেরা আসনে থাকতেন, তার জমি রক্ষার চেষ্টায় সময় ব্যয়ের দরকার কি। আমি জানি, এ সংস্কৃতির সেরা আসনটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রত্যখ্যান করতেন এবং শব্দের গুরুত্ব, জমি, নোবেল, শাল ইত্যাদি সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টায় সময় অতিবাহিত করতে বাধ্য হতেন, যদি অন্য দেশে পালিয়ে না যেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধটি আমাদের প্রধানতম পত্রিকায় ছাপা হতো। সন্ধ্যা নাগাদ কয়েক কোটি সচেতন ও দায়িত্ববান নাগরিক, জাতির জন্য করণীয়’র অংশ হিসেবে হাহুতাস করে, রাত দশটা নাগাদ ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিমগ্ন হতেন। তারপর তারা, তাদের বাবা’রা, ভাইয়েরা দুটি শ্রেণীতে ভাগ হয়ে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঠিক করবেন, একটা শ্রেণী শোষণের, আরেকটি টিকে থাকার। জীবনানন্দ দাসের কথা ভাবছি, এই দুটো শ্রেণীর বেঁচে থাকার চিত্রতে তিনি কেবলই রাজাধীরাজ ও অন্যান্যদের কীটপতঙ্গ, ইত্যাদি হিসেবে দেখতে পেতেন। তার শ্লোকে জন্ম নিত আরো সহ¯্রতর শালিক, শকুন, বিবর্ণ ডানার চিল ও তাদের পাকস্থলীর খবরাখবর, জীবনাচার, দর্শনের নির্মম অনুষঙ্গ। জীবনানন্দ দাসের শ্লোক আমাদের পরবর্তী অশুভ দিনের হুল্লোড় পেরিয়ে জাতির জন্য করণীয়’র অংশ হিসেবে কোন হাহুতাস তৈরী করতো না, তার মৃত্যু পর্যুন্ত। এই যেমন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের বাইরের মানুষগুলোর দাবী কেবল চিৎকার বলে স্বীকৃত হচ্ছে, হয়তো শব্দ দূষণের দায়ে ঋদ্ধও হচ্ছে। আজ আমাদের সংস্কৃতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিকৃষ্ঠের দিকে এগুলোও, আমাদের কার্যসক্ষম বোধ নেই, কোন উদ্বেগ কিংবা উদ্যোগ নেই। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র অবক্ষয় চর্চা ও সয়ে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প রাখছে না। আমাদের কোন বোধ আর সক্রিয় হচ্ছে না অনাচারে। এ দেশের পাড়ায় পাড়ায় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছে নূর হোসেন’রা ও তাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ষোল কোটি মানুষের দায়িত্ব নেয়া এজেন্সিগুলো। এই রাজা সাহেবগণ রাজনৈতিকতার নামে এ খাতে বিনিয়োগ করে স্ব স্ব রাজ্যে ব্যবসা করার দায়িত্ব কিনছে। কেন্দ্র থেকে ক্ষমতা কিনে তারা বিনিয়োগের অর্থ অল্প সময়ে সম্ভব হলে শতগুন বৃদ্ধির প্রয়াসে চুক্তিবর্হিভূত সব খাতেও নেমে পড়ছে। এলাকার নাগরিকদের সম্পদ, সম্পত্তি, সম্ভ্রম, স্বপ্ন, জীবিকা, কর্মকান্ড- যে কোন ক্ষেত্রেই রাজাসাহেবগণ নিজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কিংবা অধিকরণ, বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষমতা লাভ করছেন। কেবলমাত্র তাদের বর্বরতার খবর উপভোগ করতে আমরা প্রতিদিন ১০ টাকার দুঃসংবাদ কিনছি। আমাদের জীবনাচারে প্রতিদিন মিশে যাচ্ছে অসুর শ্লোগান, দুঃসংবাদগুলো হচ্ছে নিজেদের গল্প। আর কেন্দ্র রাজাসাবেহগনদের থেকে লাভবান ও টিকে থাকার সমর্থন, শক্তি পেয়ে তাদেরও নিরাপত্তায়, বিকাশে প্রশাসন ব্যবস্থা দিচ্ছে। বাণিজ্যে কৃত্তিবাণ হওয়ার জন্য অস্ত্র, বাহিনী ইত্যাদি মুক্ত করছে। আমি রাজাসাবেহগণদের সহচার্যদের কথা বলছি, যারা ভোগ করছে নিমগ্ন স্বাধীনতা।  আর এক একজন নাগরিকের কথা বলছি, কেন্দ্র যাদের পিষ্ট করে স্বাধীনতা ভোগের নিশ্চয়তা দিচ্ছে ব্যবসায়ী রাজাসাহেবগণ, তাদের সহচার্যদের ও প্রশাসকগণদের। নাগরিকগণ আশ্চর্য হয়ে সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠাণ দেখছি। মাননীয় নামধারী যে কেউ মঞ্চে বসছেন, আব্রাহাম লিংকনের নাম জাল করে নিজেরাই স্বাক্ষর করছেন গণতান্ত্রিক সার্টিফিকেটে এবং সেটি বিতরণ করছেন এলাকার যত মন্দ ব্যক্তিটিদের মাঝে। এইসব মেনে নিয়ে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা ও অনাহারে বাধ্য নাগরিকগণ লুকিয়ে লুকিয়ে অংশগ্রহণ করছি মুখের মিছিলে, আবার মাঝেমাঝে আমরাই প্রত্যক্ষ মিছিল করেও ভোট দিয়ে আসছি রাজাসাহেবদের। বিজয়ীগণ পয়সার পাশাপাশি বাণী খুব পছন্দ করেন বলে আজ জাতীয় সঙ্গীতের চেয়ে এ জাতি স্তুতি গাইতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। একজন বিশ্বনাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের গত আটাশ বছর আমার দুঃস্বপ্নের মত কেটেছে। অদ্ভুত সংস্কৃতির এই দেশে কোন ভাবেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছি না। এই এলাকায় প্রতিটি মানুষের প্রতিটি দিন কাটছে তাড়না, চাহিদা, প্রতারণা, লড়াই, দখল, জোর, অস্ত্র, বারুদ, রক্ত, ক্ষুধা ইত্যাদি অশ্রাব্য শব্দের সঙ্গে। ইতিহাসে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় আমরা যা পাই, আজকের পত্রিকায় কিংবা যে কোন গতকালের পত্রিকায় ছাপানো শব্দগুলো সম শ্রেণীর, আরো ভয়ানক, সহিংস ও অবিশ্বাস্য কলঙ্কের। এই কলঙ্কের বন্যা ভেসে যাচ্ছে সাধারণ মানুষগুলোর উপর দিয়ে। সরকারে থাকা এজেন্সিগুলো যেটুকু গুডনিউজ দিচ্ছে, তাদের অধিকর্তা, অনুকর্তা, উপকর্তারা তার তিনগুন ব্যাডনিউজ তৈরী করছেন। গোপনে ও প্রকাশ্যে। এসংখ্যক মানুষগুলোর অশুভ সংবাদ প্রত্যকটি নাগরিকের উপর চক্রাবৃদ্ধি হারে প্রভাব ফেলে আসছে। ফলে বর্ধনের খাতিরে আমাদের মানুষগুলো ঘুম থেকে জেগেই মুখে পরে নিচ্ছে মুখোশ। তারপর ভাঙছে সভ্যতার সিঁড়ি। রাষ্ট্রীয় এজেন্সিগুলো দক্ষতার বর্হিপ্রকাশ হিসেবে রোজা, ঈদ, বৈশাখ, গ্রেট ডে ইত্যাদি উদ্যাপনের ব্যবস্থা করছে, আর তখন আমাদের মানুষগুলো মুখোশ খুলে হচ্ছে সংস্কৃতিবান। আমরা একজন পুলিশ অফিসার কিংবা সদস্যের দিকে তাকাই। রাজাসাহেবকে ৬/১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়োগপত্র কিনতে হচ্ছে, অফিসের দ্বিতীয় দিন থেকে তার তাড়না ঘুষের টাকাটি তুলে এনে লাভ করা, সে তার তাড়নার লক্ষ্য স্থির করে নাগরিকের উপর। ঊর্ধ্বোতনের দাবীও মেটাতে হয় এ প্রক্রিয়ায়। আমরা একজন ডাক্তারের দিকে তাকাই। একজন মেধাবী ছাত্রের ডাক্তার হবার প্রক্রিয়া ও নিয়োগ পাওয়ায় যে খরচ, ডাক্তার পেশার মর্যাদা রক্ষায় সে তার অজ¯্রগুন তুলে নিতে চায় নাগরিকের উপর থেকে। লোকাল উকিল কিংবা ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিসারের দিকে তাকাই, একজন রেলস্টেশন মাস্টার ও অন্যান্য সেবা খাতের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পর্যন্ত যেন একএকজন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিদার, রাজাসাহেবের থেকে তারাও কিনেছেন জামদারি, সুতরাং নীতিলোপ সিদ্ধ। টার্গেট নাগরিক।  একজন যানবাহন চালকের কথা ভাবুন, বিপদে পড়েছেন তো ভাড়া দ্বিগুন বাড়িয়ে দেবে। বাহন চালনার ব্যয় পদ্ধতি তাকে বিপদগ্রস্ত মানুষ খুঁজতে প্রেরণা দেয়। একজন ব্যবসায়ী কেবলই একজন ব্যবসায়ী। ঢাকা শহরে ২ টাকা ছাড়া পানের যোগ্য ছোট এক গ্লাস পানি মেলে না, আমাদের ব্যবসায়ীগণ এরচে’ কঠোর নীতি অবলম্বন করেন ব্যবসায়। টার্গেট নাগরিক।  আমাদের একজন শিক্ষকের দিকে তাকাই, আঞ্চলিক-উপ আঞ্চলিক রাজাসাহেবদের মান ভেদে ৪-১২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়োগ কিনতে হয়। ঘুষের টাকাটি তুলে আনার প্রবণতা তার মধ্যে কাজ করে, এই নীতিভ্রষ্ট মানুষটি তার ছাত্রদের সুনীতি চর্চায় কিভাবে উদ্বুদ্ধ করবে? ফলে সরকারি অফিসারের মত একজন শিক্ষকও যৌতুক নেবার প্রবণতা চর্চা করেন। বাড়িওয়ালার দিকে তাকান, এই মানুষটিও যেন কেবলই বাড়িওয়ালা। একজন গাড়িওয়ালার মত সেও ঠিক দেয়ালে হৃদপিন্ড বিছিয়ে রাখে, ছ’মাস পেরুলে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া তার কোন আচরণ নাই। আমাদের একজন টোকাই কিংবা তার সর্দার যাচ্ছেতাই করতে পারে। উর্দ্বোতনকে ভাগ দিয়ে চুরি, ডাকাতি, লুট, অগ্নিসংযোগ কিংবা চাঁদা নেবার মত কাজ ইচ্ছে মতই করতে পারে। তাদের লক্ষ্য নাগরিক। ঠিকাদার সাহেবের দিকে তাকাই কিংবা অন্যান্য বিশটি পেশার দিকে তাকাই, আমরা প্রতিটি প্রক্রিয়াতেই নাগরিকদের ঠকানোর প্রবণতা দেখতে পাই। আমরা এবার একজন রাজনৈতিক কর্মী, কিংবা নেতার দিকে তাকাই। তার বক্তব্য, তার কর্মকান্ড, তার আচরণে আমরা মাঝে মাঝেই আঁতকে উঠি। এমন কিছু নাই, তারা করেন না। বলা যেতে পারে, সকলে দুর্বৃত্তপনা করছে না, হয়তো তাই, কিন্তু তাতে সিস্টেমে শুভ পরিবর্তন আসছে না। কিন্তু তাদেরও, যখন তারা বলেন, ‘সীমান্তে হত্যাকান্ড নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়’, কিংবা বিড়াল বেড়িয়ে আসে আমরা আঁতকে উঠি,  যারা আঁতকে উঠি, তারা নাগরিক। , আমরা একজন নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের দিকে তাকালে দেখতে পাচ্ছি, এ সম্পর্ক সুমধুর কিংবা মধুর নয়। বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এখানে আমি একজন নাগরিক। পুঁজি বিনিয়োগহীন হওয়ায় যার চাকরি, ব্যবসা কোন কিছুই হচ্ছে না। রাজাসাহেবদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করতে না পারায় প্রতিদিন ব্যর্থ হচ্ছে উদ্যোক্তা হবার বাসনা। কিন্তু তাদের টিকিট কেনার মত সাধ্য না থাকায় হচ্ছে না। গ্রাজুয়েশন, অভিজ্ঞতা, ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার, প্রপোজাল কোন শব্দই তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। যারা আমার মত নাগরিক, বিনিয়োগ বিহীন তাদের দিকে তাকালে আমরা অদ্ভুত জীবনাচার দেখতে পাবো। এই সংস্কৃতিটি খুব লুকোলুকি’র। আমি একটি সিস্টেম লসবিহীন দেশ কিংবা মঙ্গলরাষ্ট্রের কথা ভাবছি, আমি সেখানে সুখী হতে পারতাম, কাজ ও বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয়, উদ্বেগ না থাকায় আমিও উপভোগ করতে পারতাম বৃষ্টি ও অন্যান্যের সৌন্দর্য। আমার প্রিয়তমা’টিও হয়তো ভালবাসার মুহর্মুহ গুরুত্ব আবিস্কার করতো, এ রাষ্ট্রের সিস্টেম ও চালিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সংস্কৃতি গত নয় মাস তাকে বিচ্ছিন্ন করেছে। তার মত আমিও আমার কোন ভবিষ্যৎ জানি না। অন্যান্য মানুষগুলো, যারা কেবল রাষ্ট্রের নাগরিক, বিনিয়োগে অযোগ্য মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করে শুনেছি, তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। এ বিকট সংখ্যকের সংস্কৃতি শালিক, শকুন কিংবা অন্যান্য পোকামাকড়ের মত, জীবনানন্দ দাসের কবিতায় যারা স্থান পেতে পারে। যারা প্রতিদিন আঁচড় খেয়ে রুক্ষ স্বভাবে ভরপুর হচ্ছে। এই মানুষগুলো ও শোষক মানুষগুলো একসাথে ঈদ, রোজা, বৈশাখ, গ্রেট ডে ইত্যাদি পালন করলেই জাতি সংস্কৃতিবান হবে কেন?  এ দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সংবিধান ও আইন প্রণেতাদের অপরিসীম ব্যর্থতায় আমিও ডুবে যাই। এ দেশের সংবিধান, প্রণেতাদের ছেলের কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের স্বার্থে, আইন তৈরী করা হয়েছে দুর্বৃত্তদের পক্ষে। ফলে নাগরিকগণ কেবল ভুক্তভোগী হবে এটাই নিয়ম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের থিওরি হয়তো আকর্ষণীয় কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই উল্টো। প্রায় অর্থশতাধিক বছর যাবতীয় অনিয়মগুলো নিয়ম হয়ে চলছে আর তাতে নাগরিকগণের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছেই। একজন নাগরিকের দিকে তাকাই, রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের জায়গাটি খুবই অনাস্থার। এ অবস্থা বদলাতে হবে। 
অংশু মোস্তাফিজ, বগুড়া। 



বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তরুনদের ভূমিকা

ভূমিকা: 
বিপর্যস্ত পরিবেশের যাবতীয় সূচকে বাংলাদেশ মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছে। এ অবস্থার উত্তরনে বাংলাদেশের সরকার, সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিদের পাশাপাশি তরুনদের দায়িত্বশীল ও প্রায়োগিক ভূমিকা রাখার বিশেষ জায়গা রয়েছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের তরুনরা পরিবেশ বিপর্যয় রোধে আশানুরূপ কাজ করছে না। ‘বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তরুনদের ভূমিকা’, পুরো বিষয়টি সহজবোধ্য করবার প্রয়াসে রচনাটিতে কয়েকটি খন্ডিত অংশে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
০১.০০ পরিবেশ কি?
সম্যক অর্থে বুঝি, আমরা মানুষ এবং আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যা কিছু সৌরজগতের কাম্য ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, তাই পরিবেশ। আভিধানিক অর্থে পরিবেশ বলতে বলা হয়, ঠিকানা, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি। মানুষ ও অন্যান্য জীব, উদ্ভিদ জগতের জীবন ধারণ, বর্ধণ ও অন্যান্য ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্র তৈরী করে পরিবেশ। সুতরাং পরিবেশ শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের অন্তর্গত আলো-বাতাস, মাটি, আসমান, পানি, বন, পাহাড়, শব্দ, নদী-নালা, মেঘ, সাগর-মহাসাগর ইত্যাদি। আবার মানুষের তৈরী যাবতীয় অবকাঠামোও। মানুষের প্রয়াস, প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীজগত সমন্বিত হয়ে যোগ্য পরিবেশ তৈরী হয়।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় পরিবেশের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পরিবেশ বলতে কোনো ব্যবস্থার ওপর কার্যকর বাহ্যিক প্রভাবকসমূহের সমষ্টিকে বোঝায়। যেমন: চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ুু ও প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান ইত্যাদির সামষ্টিক রূপই হলো পরিবেশ।’
০১.০১ পরিবেশ বিপর্যয় কি?
মানুষ্য সৃষ্ঠ বা প্রাকৃতিক কোন উপাদান যদি সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশের ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে সেই ধারণা ও ফলাফল পরিবেশ বিপর্যয়। ক্ষতিকর উপাদানসমূহ বাস্তুসংস্থানে অনিষ্ট আনয়ন করে, এ অবস্থায় মানুষ, জীব, উদ্ভিতজগত ও বায়ুমন্ডল হুমকির সম্মুখীন হয়। বিপর্যস্ত পরিবেশ স্বাভাবিক বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠা ও কর্মকান্ড ব্যহত করে। পরিবেশ বিপর্যয় ভবিষ্যত সময়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিষময় পরিস্থিতি তৈরী করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবেই পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে।
০১.০২ পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিকর দিকসমূহ: 
পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সরাসরি ক্ষতির শিকার হচ্ছে মানুষ, জীব, উদ্ভিতজগত ও বায়ুমন্ডল। বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিসমূহ নিয়ত দৃশ্যমান না হলেও নিয়মিত যেসব পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে, তাতে ইতোমধ্যে জীব জগতের বেঁচে থাকা উদ্বেগ ও আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার কয়েকটি আলোচনা করা হলো:  
তাপমাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
ঋতুচক্রে পরিবর্তণ হচ্ছে। অর্থাৎ অসময়ে শীত, বর্ষা, গরম আসছে, যাচ্ছে।
ভেজাল, ফরমালিন, বিভিন্ন রাসায়নিক খাদ্যদ্রব্যকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
দূষণের কারণে খাবার পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
খারাপ আবহাওয়ায় চাষবাস, উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
জলবায়ুতে ধোঁয়াশার পরিমান বাড়ছে। নি:শ্বাসের জন্য সুস্থ্য বাতাসের অভাব দেখা দিচ্ছে।
মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস, কিডনি বিকল, ফুসফুস- ক্যানসার ইত্যাদি রোগে অধিক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
অসুস্থ পানি, বাতাস. খাবার, শব্দে জনস্বাস্থ্য বিনষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু বাড়ছেই।
উপকূল এলাকায় ফসলী জমি ও বাসস্থানের ক্ষতি হচ্ছে।
নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, অকাল খরা বাড়ছে।
বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
ইত্যাদি।

০১.০৩ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে: 
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিবেশ বিপর্যয়ের ফল ভীতিকর অবস্থায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ রোগই পরিবেশ বিপর্যয়গত। নি¤েœ কতিপয় স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো পরিবেশ বিপর্যয়ের অনিবার্য ফলাফল হিসেবে আমাদের সুস্থ্যতা নষ্ট করছে।
অতিরিক্ত শব্দে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বায়ুদুষণের ফলে দেশে ব্রন্কাইটিস, নিউমোনিয়া, ফুসফুস ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা, ব্রেইন, নার্ভ, লিভার ও কিডনী রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দুষিত পানি ব্যবহারের ফলে ডায়েরিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, জ্বর, আমাশয়, জন্ডিস ইত্যাদি রোগ ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে।
সহজেই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ছে।
শিশুদের মেজাজ হচ্ছে খিটখিটে। বিপর্যয়ের পুরো প্রক্রিয়া তাদের লেখাপড়া, বেড়ে ওঠার ওপর প্রভাব ফেলছে।
শব্দদূষণ স্নায়বিক বৈকল্যের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বৃহত্তর অর্থে প্রত্যক মানুষই ঘুম, শ্রবণশক্তি, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিষাক্ত খাবার খাওয়ায় শরীরের সুস্থ্যতা নষ্ট হচ্ছে ও নতুন পুরাতন বিভিন্ন মেয়াদী রোগ বাড়ছে।

০২.০০ বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণসমূহ: 
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।
শিক্ষা: বাংলাদেশের তৃণমূলের উৎপাদক শ্রেণী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত না হওয়ায় সচেতনতার অভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে।
শক্তি উৎপাদনের চাহিদা: ভোক্তা বাড়ায়, উৎপাদক প্রতিষ্ঠাণগুলোর শক্তি উৎপাদনের চাহিদা বাড়ছে।
প্রযুক্তি ব্যবহার না করা: বাংলাদেশের বেশিরভাগ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এখনো পুরনো প্রক্রিয়ায় চলে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে আমরা প্রযুক্তিগত সুবিধার যথেষ্ঠ নিতে পারছি না।
অযাচিত হস্তক্ষেপ: প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থার উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বাড়ছে যেমন, বন ধ্বংশ, পাহাড় কাটা, জলস্থান ভরাট ইত্যাদি।
রাজনৈতিক দুবৃত্তপনা: বাংলাদেশে রাজনৈতিক মিছিল, সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ ইত্যাদির সময় গাছ কাটা, আগুন জ্বালানো, অতিরিক্ত শব্দের ব্যবহার, বোমাবাজি ইত্যাদি থেকে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হয়।
ভোগ, দখল: বাংলাদেশে প্রভাবশালীরা জমি, নদী, বন নিয়মবহির্ভুতভাবে ভোগ, দখল করে থাকেন। যেমন, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মান এবং নদী/বিল শুকিয়ে ধান চাষ, পাহাড় কেটে বসতি নির্মান ইত্যাদি। তাতে বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি হয়।
অপরিকল্পিত কাঠামো: বাংলাদেশের অধিকাংশ ভৌত কাঠামো যেমন বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ, হাসপাতাল, কলকারখানা, গার্মেন্টস ও ইপিজেড গড়ে উঠেছে বিপর্যয়ের দায় ধারণ না করেই।
জলনগর: বাংলাদেশের নদীর তীরে গড়ে উঠেছে জনপদ, শহর, নগর। নদীতে ফেলা হচ্ছে চটকল, কাপড়কল, কয়লা ধোলাইকল, চিনিকল, কাগজের কল, ভেষজ তেল তৈরি, চামড়া পাকা করার কারখানার বর্জ্য, দূষিত রাসায়নিক ও  আবর্জনা।
শব্দের ব্যবহার: যানবাহনের হর্ন, কলকারখানার আওয়াজ, পটকার শব্দ, টেলিভিশনের শব্দ, লোকজনের চেঁচামেচি, উৎসব, মাইকের সুর নিয়ে বাংলাদেশে নিয়মিত দিনানিপাত করছে।
যন্ত্রপাতি: ব্যবহৃত অধিকাংশ যন্ত্রপাতি ও সড়ক-মহাসড়কের যানবাহন ব্যবহার অনুপযোগী। এসব পরিবেশ বিপর্যয়ে ভূমিকা রাখছে।
নিষ্কাশন ব্যবস্থা: ধুলো, আবর্জনা, যত্রতত্র ডাস্টবিন, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যস্ত করে তুলছে।

০২.০১ পরিবেশ বিপর্যয়ে দায়ী কারা?
বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের পেছনে দায়ী বিশাল সংখ্যক জনগন, যারা সচেতন ও অসচেতনভাবে বিপর্যয়ে ভূমিকা রাখছে।
সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণ দায়ী, যারা অহব্যবহার ও অনিয়মতান্ত্রিক উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশ বিপর্যস্ত করছে।
আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশসমূহ ও অসংখ্য প্রতিষ্ঠাণ দায়ী, যারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নির্দভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। যেমন, বিলাশী পন্যের উৎপাদন ব্যবস্থা, অস্ত্র-গোলা বারুদ উৎপাদন ও ব্যবহার, তেজষ্ক্রিয় দূষণ ইত্যাদি।
০৩.০০ পরিবেশ বিপর্যয় রোধে বাংলাদেশের তরুনদের বর্তমান ভূমিকা:
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের তরুনদের অবস্থান ষ্পষ্ট হলেও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তারা ততটা সক্রিয় নয়। বিচ্ছিন্ন ভাবে ও উৎসব করে গাছ লাগানোর মত কর্মসূচিগুলোতে তরুনরা ব্যপকভাবে অংশগ্রহণ করলেও ব্যপ্ত অর্থে বিপর্যয় রোধে তারা অসচেতন। কখনো কখনো পরিবেশ বিপর্যয়ে নিজেও দায়গ্রস্থ। আইটি খাত কিংবা ক্যারিয়ারের প্রতি তরুনরা যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, পরিবেশের সুরক্ষায় তার সামান্যতমও নয়! ফলে পরিবেশ বিপর্যয় আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দু:সংবাদ হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।
০৩.০১ কাম্য ভূমিকা:
তরুনরা দেশের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠি হওয়ায়, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তাদের সক্রিয় ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব বহন করতে পারে। পরিবেশ, নিজের অবস্থান, পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক, আমাদের আচরণ, ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হয়ে এবং পরিবেশের প্রতি স্বাভাবিক ভালবাসা প্রদর্শণের মাধ্যমে প্রত্যকটি তরুন আবহমানকাল ধরে চলে আসা বিপর্যয় রোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তরুনরা যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, নি¤েœ সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো:
নিজে পরিবেশ বিপর্যয়ের মিছিলে সামিল না হয়ে।
নিজের বাড়ি ও সম্ভাব্য এলাকায় বৃক্ষের চারা রোপন করে।
ব্যক্তিগত, সামাজিক ও মানবিক দায়ঋদ্ধতায়।
পরিবার, কমিউনিটি, তথা স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়, স্বজন, বন্ধু, আড্ডা, পরিচিতির মধ্যে স্বপক্ষে মতদান ও জনমত তৈরী করে।
প্রত্যক্ষ মানব সৃষ্টি বিপর্যয়ের শান্তিপূর্ণভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে, প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কিংবা সিটিজেন সাংবাদিকতায় নিজের মত প্রকাশ করে।
বৃক্ষরোপন, আচরণগত পরিবর্তণে নাটিকা, মেলা, অভিযান ইত্যাদি সামাজিক কর্মসূচি আয়োজনে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
দেশপ্রেম এবং তারুণ্যের অঙ্গীকার হিসেবে গণসচেতনতার ব্যক্তিগত ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
সামাজিক আন্দোলনের একজন কর্মী হবার কিংবা নেতৃত্ব দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় ভিত্তিক সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ করে।  
ধুমপান, হাঁচি-কাশি কিংবা পানি ও শব্দের সৎ ব্যবহারের মত বিষয়গুলোতে সু-অভ্যাস গড়ে তুলে।
গাছ কেটে রাস্তায় বেড়িকেট দেবার মত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় না জড়িয়ে।

০৪.০০ পরিবেশ বিপর্যয় রোধের উপায়সমূহ:
সব শ্রেণী, পেশা, ধরণের মানুষ ও প্রতিষ্ঠাণ বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটালেও এটা নিয়ন্ত্রণ করার প্রধানতম দায়িত্ব সরকারের। এখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে যথাযথ আইনের প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা ‘জরুরী কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। রাষ্ট্র, সমাজব্যবস্থাপক ও সাধারণ জনগনের সচেতনতা, উদ্যোগ, উদ্যোম, কাজ ও অভ্যাসই পারে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে। নি¤েœ কতিপয় উপায় আলোচনা করা হলো:
জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কার্যকরী ভূমিকা পালন।
জনগনের ভালো উদ্যোগকে উৎসাহিত করা বা প্রণোদনা দেয়া।
যত্রতত্র মাইক, প্লেয়ার, হর্ন বাজানো বন্ধ করা।
আবাসিক ও কলকারখানার জন্য আলাদা স্থান ও পরিকল্পনা করা।
প্রযুক্তি ব্যবহারে কলকারখানার দহন-প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা।
বৃক্ষমেলা, বৃক্ষরোপণ অভিযান, বৃক্ষনিধন রোধ ইত্যাদি কার্যক্রম বাড়ানো।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস তৃণমূল পর্যন্ত পালনের ব্যবস্থা করা।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতি প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
জনসংখ্যা কাম্য সংখ্যায় নামিয়ে আনা।
শিল্পবর্জ্য পরিশোধন, নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
কাঠের জ্বালানী ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। বিকল্প জ্বালানী উদ্ভাবন করা।
রাজনৈতিক দুবৃত্তপনা বন্ধ করে, পরিবেশের উন্নয়নে তাদের ভূমিকা রাখা।
উপসংহার: 
বাংলাদেশের তরুনরা আগ্রহী, উদ্যোমী ও সচেতন। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তারা প্রায়োগিক ভূমিকা রাখবে, অনেকে রাখেও। অনেক সীমাবন্ধতার মধ্যেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খাতে অংশগ্রহণ করে তরুনরা সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। বিশ্বনাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময় ও পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীব্যাপি মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবধর্মী পরিস্থিতিতে তরুনদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা জাগরনের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। বিজ্ঞান, কৃষি কিংবা বাণিজ্যঘটিত বিষয়গুলোর মত মানবিক ও সামাজিক বিষয়গুলোতে যাতে অধিক সংখ্যক তরুন সাড়া দেয়, সে পরিকল্পনা সরকার ব্যবস্থাপকদের গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ আন্দোলনের মত ধারণাতে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তরুনদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা গেলে, বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব।  

অংশু মোস্তাফিজ
৩০, ০৫, ২০১৪

হুমায়ুন আজাদ/ প্রিয় অশুদ্ধ

 

হুমায়ুন আজাদ/ প্রিয় অশুদ্ধ

যখন আপনাকে জেনেছি এবং মেনেছি কৈশরের ঈশ্বর বিশ্বাসের মতন/ যখন খুঁজেছি অধরা প্রেমিকার শাররীক তিলগুলো আবিস্কারের মতন/ তখন আপনি একজন মরা মানুষ/ সম্ভবত দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে কবরে শুইয়ে রাখা হয়েছে আপনাকে/ ক্যামেরার সামনে পোজ দেবার মতন ক্ষমতা নেই অবয়বে/ নিথর পড়ে আছেন/ আপনার শরীরময় সর্বভূক কিছু পোকা, যেমন মাতৃদেবীর মতন প্রিয় স্বদেশের শরীরে সর্বভূক পোকা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন আপনি/ আঁতকে উঠতে উঠতে বলেছিলেন একদিন, সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে’/ পোকামাকড় আপনাকেও চিবোতে চিবোতে কঙ্কালসার করে তুলেছে/ আমি এভাবে আপনাকে দেখতে চাইনি/ তাই যাইনি/ হুমায়ুন আজাদ- দেখা হয়নি/ উদ্ভানে-র মতন খুঁজেছি নাজাত/ আপনার দর্শন - কর্ম- কৃপণতায় (অসমাপ্ত)

 

 

----------------------------------- -------------------------------------------------------- 

রাত্রীকালীন সাংবাদিকের ভাঙ্গা ডাটের চশমা



১২. ০৬ মিনিট

রাত বারোটা ছয় মিনিটদ্বিতলার সিড়িবেয়ে আবারো উপরে উঠলো সেজিজ্ঞেস করলো, গাড়ি তাহলে কিনেছে? হ্যাঁ বললো জলিল এবং বললো ম্যাডাম বলেছে, তেত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেআবারো জিজ্ঞেস করলো ছেলেটি, কত? তেত্রিশ লাখ টাকা, জলিল আবার বললোটাকাগুলো কোত্থেকে আসলো ছেলেটি বললোজলিল বললো, জমি বিক্রি করেছেলেটি বললো, ঠিক হলো নাজলিল জিজ্ঞেস করলো, তাহলে কোথায় পেল টাকা? ছেলেটির সোজা উত্তর, টাকা তুমিই দিচ্ছোআমারটাও দিচ্ছো

আবারো দ্বিতলার সিড়ি বেয়ে হনহন করে নিচে নেমে গেল সেগল্পের সুবিধার্তে ধরে নিই, তার নাম অনিমেষপঁচিশ বছরের রোগাটে একটা ছেলেরাস-া দিয়ে হাটতে হাটতে উদ্দেশ্যহীন বলে, আবার তেত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন, তিনি চে গুয়েভারার ভক্তআমি শালা রাত বারোটার অফিস ফেরত পথিকতার কর্মচারীদু হাজার বারো সালে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেতনভাতা দিয়ে বলেন, উজার করে দিলামআর ক্ষমতা নেইগল্পের এই পর্যায়ে কাশতে কাশতে বাম বুক চেপে ধরলো অনিমেষভেতর থেকে পচা গন্ধ বেরুনো কাশতার একটু আগে চেয়ার ছেড়ে ওঠার সময় অনিমেষ বলেছিল, এ মাসের স্যালরি দেখেই ফাইনাল করবো, এভাবে চাকরি করা আর সম্ভব কি নাম্যানিব্যাগে তাকিয়ে দেখলো শেষ পঁচাত্তর টাকাএকটা সিগ্রেট জ্বালালো সেতার একটু আগে বউ ফোন করেছিলবলেছে, খুব মিস করছি তোমাকেদ্রুত নিয়ে যাওআর একটু স্যালারি বাড়-ক, নিয়ে আসবোআমিও মিস করছি তোমাকেবললো সেছেলেটি অর্থাৎ অনিমেষের বিয়ের বয়স এক বছরে দাঁড়াবে এ মাসের শেষের দিকেবউ বলেছে, এই একটা দিন তার সাথে কাটাতেঅনিমেষ বলেছে, টাকা থাকলে যাবোওর যাওয়া হবে নাশ্বশুরবাড়ি দেশের শেষ প্রানে-চারপাঁচ হাজার টাকায় গিয়ে ফিরে আসা সম্ভব নয়এ মাসেই দ্বিতীয় বর্ষের ফি বাবদ ২৭শ টাকা জমা দিতে হবে কলেজেছোটভাই জানিয়েছে, চাকরি ছেড়ে দিলে মাসে ছহাজার টাকা সে দিতে পারেবউ চায় চাকরি ছেড়ে দিক অনিমেষ

মেসে ফিরেই তিনজন বসে পড়লোএখানে একটা আসর হবেরাত বারোটা চুয়াল্লিশআসর হবে গাঁজার, যাকে তামাক বলে চালায় অনিমেষেরাকিভাবে মৌসুমীর নগ্ন ভিডিও করা হয়েছিল তার গল্প শুনতে থাকা একজনকে একসময় অনিমেষ বললো, আজকের মালটা ভালোভালো মাল পেলে বলবেন, দুতিনশ টাকার কিনে রেখে দেবোগন্ডাখানেক বাঁশি শেষ হতে হতে আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলো আসরেসবাই সুখী মানুষকিন' এই সুখী মানুষগুলো দূঃখগাঁথা নিয়েই কেবল কথা বলছেঅনিমেষ জানালো, আজ রাতে সে একটা গল্প লিখতে বসবে, যার নাম হবে, রাত্রীকালীন সাংবাদিকের ভাঙ্গা ডাটের চশমাবেশ হবে বলে জানালো অন্য দুজন

রাত ০১.০৬

ভাত খেতে এসে অনিমেষ দেখলো গন্ধ বেরুচ্ছেগ্যাস্ট্রিকে আক্রান- বুকটাকে সে আর কষ্ট দিলো নাঅনিমেষ লিখতে বসলো রাত্রীকালীন সাংবাদিকের ভাঙ্গা ডাটের চশমা নামের ঐতিহাসিক এক গল্পকিন' আমি জানি, অনিমেষ গল্পটাকে ঐতিহাসিক করতে পারবে নাকারন, এখানেও সে সব সত্য বলতে পারে নানিজেকে ভালবেসে প্রতিদানস্বরুপ মিথ্যাও বলেসত্যটুকুর পুরোটা বলতে পারলেই এটা হয়ে যেত ঐতিহাসিককানে হেডফোন লাগিয়ে অনিমেষ গান ছাড়লো জহির আহমেদের, তাজমহল দেখে মনে হয়/ আজো সে প্রেম এসে কথা কয়গল্পের এ পর্যায়ে অনিমেষ আরেকটা স্ট্রিক (তামাক ভর্তি সিগ্রেটের শলাকা) বানালোএখনই চুমো দেবে সেআকাশ দার কথা মনে পড়লোবিকেলে দেখা হয়েছিলশেষে বললো, শরীরের যত্ন নিওতিন বেলা ভাত খাবার মত রুচি কোথায়? অনিমেষ ভাবলো, কাল থেকে আর অফিসে যাবো নাবিদঘুটে গদবাঁধা সত্ত্বেও গল্পের প্রয়োজনীয় অংশ হবার খাতিরে বলে রাখা ভালো, চার পৃষ্ঠার এ পত্রিকার অর্ধেকটা খবরের কাজ অনিমেষ একটাই করেসম্পাদক কিংবা মালিকপক্ষ মাসের পর মাস অফিসে আসেন নাঢাকা থাকেনব্যবসা করেনএটাও একটা ব্যবসা মাত্রদায়িত্বটা অনেক বেশিসম্পাদকের অনুপসি'তে তার কাজগুলোও করছে অথচ চাকরিজীবি হিসেবে অফিসে আর সবার মত ওরও পদবী চুক্তিভিত্তিক খন্ডকালীন সাংবাদিকস্যালারি পাঁচহাজারপাঁচশ টাকাএটাই এখানকার সর্বোচ্চ বেতনবলাই বাহুল্য, লোকালভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি পত্রিকা, যারা কাগজ বিক্রি করেও লাভ করেমালিকপক্ষ বলছেন, আর পারছি নাভাবতে দোষ নেই কিংবা বলতে পারেনতোমরা ভৃত্য আমার, আমি জমিদারখানসেনার জাত আমিগল্পের সুবিধার্তে এমনটি ভাবা সংগত নয়অনিমেষও তেমনটি ভাবেনিমাত্রই ভেবেছে, মালিক কিংবা সম্পাদক সাহেব বাঘ পোষা এক বর্নচোরা মানুষযিনি মানুষকে নিয়ে খেলতে পারেনসম্ভবত তিনি এটা জানেন এবং আরো মজা পানএবং বলেন, তোমরা ভৃত্য আমার, আমি জমিদারখানসেনার জাত আমিতার সেরা উক্তিগুলোর একটি, মানুষ আজ মানুষ ছাড়া আর সবকিছুতার একটি কবিতার বই আছে এমন নামেতিনি চে গুয়েভারার ভক্তযিনি চে গুয়েভারার ছবি দেয়া টি শার্ট বানিয়ে বিলি করেন পত্রিকার পাঠকদের মধ্যেযিনি আরেকটি গাড়ি কিনেছেন তেত্রিশ লাখ টাকা দিয়েমাত্র শেষ করে আসা একটি খবরে শিরোনাম, ঋণের দায় কাটতে সন-ান বিক্রি করলেন এক হতভাগিনী মা!, মনে মনে ভেবে হেসে উঠলো অনিমেষএই হতভাগিনীদের সন-ানকে বাঁচাতে আমরা একজন চে গুয়েভারাকে খুঁজছিযাকে আঁকড়ে ধরছি, ভুল মানুষদেশটাই এখন ভুল মানুষে ভরাএই ভুল মানুষগুলো চে সেজে একটি প্লট, একটি গাড়ি, একটি তেত্রিশ লাখ টাকার গাড়ি পাবার অনুরাগে বামকে বাম পায়ে মাড়িয়ে ডান পায়ে ভর দিচ্ছেহাসতে হাসতে অনিমেষ বললো, এই ভুল মানুষগুলোর অন-ত লজ্যাবোধ নাই, যাদের মুখ এবং মুখোশ আমরা প্রতিদিনই দেখছি, কিন' বলছিনাবলছিনা, কিভাবে আমরাও সার্কাস দেখছিএকবার ইচ্ছে করলো, মুখোমুখি বলি, স্যার এটা বাংলাদেশ বলে আমি আপনাকে ছাড় বলতে পারিনাস্যার মানেই স্বৈরাচার হওয়া লাগবে কেন?

রাত ০২.০৬ মিনিট

গল্পের এখানে ঢাকা থেকে একটা ফোন কল আসে মালিকপক্ষেরধন্যবাদ জানায় ইন্টারনেটে পত্রিকা দেখাবার ব্যবস'্যা করবার জন্যযদিও জানালো এখনো তাদের ল্যাপটপে পত্রিকার লেখাগুলো পড়ার যোগ্য হচ্ছে নাঅনিমেষ জানালো, বিভিন্ন দেশ থেকেই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি, সমস্যার কথা কেউ জানায়নিবললো, মজিলা চেঞ্জ করে দেখতে পারেনমালিকপক্ষের মেয়ে ফোন নিয়ে জানালো সে সাফারি ব্যবহার করেআর বুঝালো মজিলা হচ্ছে একটা ব্রাউজারব্রাউজারের কাজ খুঁজে বের করামাথার মধ্যে জট বাধলোআট বছরের ছোট এই মেয়েটা শেখাচ্ছে মজিলা হচেছ ব্রাউজারএর আগে একবার দশবারো মিনিটের জ্ঞান দিয়েছিল ওব্যবস'া করেছিলেন তার বাবা মাজ্ঞানের বিষয়বস' ছিল জীবনবোধনিরুত্তাপ বালকের মতো তার কথা শুনেছিল অনিমেষবলতে ইচ্ছে করেছিল, তোমাদের ফেন্সিডিলের বোতলের দাম আপডেট থাকা জীবন নিয়ে আমাকে জীবনবোধ শেখাতে এসো নাযার কাছে জীবন মানে চাষকাল এবং খাবার যোগ্য এক কেজি চালের দাম তেত্রিশ টাকাআজও বলতে ইচ্ছে করলো, তোমাদের ফেইসবুকে সেক্স বিনিময় করা ইন্টারনেট জ্ঞান নিয়ে আমাকে বলতে এসো না, মজিলা একধরনের ব্রাউজারসারারাত ইন্টারনেট ঘেটে মার্কিনীদের থেকে ডলার ছিনতাই করি আমরাআমরা তোমাদের আরেকটু বিনোদনের এক একটা প্ল্যাটফর্ম বানাইতাকেও বলতে ইচ্ছে করলো, তুমিও কি মনে মনে ভাবছো এবং বলছো, তোমরা ভৃত্য আমার, আমি জমিদারখানসেনার জাত আমিমানুষ নষ্ট হওয়া রোগ সংক্রামক হোক, এটা আমরা চাইনিসব পত্রিকার ওয়েবসাইটে নামের পরে ডটকম হয়, এখানে ডটকমের আগে ব্লগস্পট লেখার প্রয়োজন কি, জিজ্ঞেস করলো মালিকপক্ষের ছেলেটিঅনিমেষ বললো, নামের পর ডটকমে কিছু পয়সা খরচ হওয়ায় আপাতত রাজি নন মালিকপক্ষআর বললো, ব্লগস্পট গুগলের ফ্রি ওয়েবসার্ভিসএই ছেলেটাকে পৃথিবীর সেরা জ্ঞানী ভেবে থাকেন মালিকপক্ষঅফিসের একজন সন্ধ্যায় বললেন, সব উচ্চবিত্তরাই এমনটি ভাবেনআর আমাদের উচ্চবিত্ত দম্পতি পরিবার একে অপরের ব্যাপক প্রসংশা করে থাকেনঅন্যদের থেকেও তাই প্রত্যাশা করেএবং প্রত্যকেই ভাবেন, তোমরা ভৃত্য আমার, আমি জমিদারখানসেনার জাত আমিগল্পের এই পর্যায়ে কাশতে কাশতে বাম বুক চেপে ধরলো অনিমেষভেতর থেকে পচা গন্ধ বেরুনো কাশ

অনিমেষ লক্ষ্য করলো, রাত শেষের দিকেনেশা কেটে কেটে যাচ্ছে ক্রমেইচেয়ারে টেনে বসতে বসতে লক্ষ্য করলো, এই রাতেও ওর ডাট ভাঙ্গা চশমায় ধুলো জমেছেউঠতে উঠতে ভাবলো, কবিতাগুলো পাঁচশ টাকা দরে বিক্রি করে দেবো কিনা, আজও জানতে চেয়েছিল মালিকপক্ষের মতন আরেক ক্রেতাযিনি খ্যাতি কিনতে শেয়ারবজারের বদলে এসেছেন কবিতা বাজারে

রাত ০৩.০৬ মিনিট

এখানেই গল্পটি শেষ হয়ে যেতে পারতোকিন' গল্পের প্রয়োজনেই আরো কিছু কথা এসে যায়সমরেশ মজুমদারের কালবেলা চরিত্র অনিমেষের নামে নাম দেয়া এই ছেলেটি নতুন সূর্য জ্বলা সকালে বিছানায় ঝিমুতে ঝিমুতে ভাবে মুখ এবং মুখোশের সমীকরণে বাস-বতা দাঁড় করানোর অসীম সূত্রনষ্ট হয় আরেকটি সোনা রোদ সকালভর দুপুরে ঘুম থেকে জেগে অনিমেষ দেখে, এটা বাংলাদেশএখানে বাস-বতা অপবিত্রতার সমান-রালএখানে জীবন মানে চাষবাসকর্মএবং খাবার যোগ্য এক কেজি চালের দাম দুই টাকা বাড়লো আজোসংসদে ওঠা এক আলোচনার সংবাদে বলে, তোমরাই সংখ্যাগরিষ্টএবং মেরুদন্ডহীন ভৃত্যতিন কিলোমিটার দুরে থাকা অফিসের দিকে পা বাড়ায় অনিমেষঅনিমেষদের জন্য এটাই সূচিকর একমাত্র রাস-ামাঝেমাঝেই মালিকপক্ষকে গাড়ি কিনে দেয়া ছাড়া গতি নাইযদিও কোন সংবাদেই অনিমেষরা এসব লিখে নালিখলে একজন পাঠক হিসেবে আমিও জানতে পারতাম, রাত্রীকালীন সাংবাদিকদের ভাঙ্গা ডাটের চশমায় জমা ময়লার কত রঙ, তাতে কত স-র অন্ধকারের।  কিংবা মালিকপক্ষ যদি একটা সম্পাদকীয়তে লিখতেন, তেত্রিশ লাখ টাকার গাড়িতে বসে গানও শোনা যায় কি না কিংবা খানসেনাদের জাত কবে থেকে ভাবছেন নিজেকেআমরা অবাক করা এক চালচিত্র দেখার প্রত্যাশায় থাকলাম

----------------------------------- --------------------------------------------------------

যে দু’টি পরিবর্তন খুব জরুরী

| অংশু মোস্তাফিজ |

বাংলাদেশের ইতিহাসে অদ্ভুত সুন্দর সময় এখন। হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি সেরা সময়ের একটি। বলা যেতে পারে কিংবা হতে পারে এটি বাংলাবষন্ত। সৌভাগ্য বটে, বষন্তকালও এখন আমাদের প্রাণগ্রাহী আবহাওয়ায় প্লাবিত করছে। আর আমরা উদাত্ত কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারণ করছি, রাজাকারের ফাঁসি চাই। আমাদের মনে প্রাণে দোল খাচ্ছে বাংলাদেশের আত্মা। যেন চল্লিশ বছর পর সে ভালবাসার স্বীকৃতি পাচ্ছে। আর আমরাও কৃপণতা ডিঙিয়ে হৃদয় খুলে বলার সাহস করছি, আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালবাসি। কি সুন্দর দৃশ্য। সব প্রেমিক রাস্তায় নেমে বলছি, আমি তোমায় ভালবাসি। এ দৃশ্য টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, যার সুতিকাগার শাহবাগ স্কয়ার। যেখান থেকে ভালবাসা পুনরুজ্জীবন লাভ করছে আর লাখো তরুন সেটা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাময়। কি সুন্দর দৃশ্য! চল্লিশ বছর অপোর পর এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে সকল দেশের রানী বলা হয় যাকে সে বাংলাদেশও আজ তৃপ্ত। কেননা, এতোগুলো প্রেমিক সে আর কখনো দেখেনি। 

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করতে চাই, যিনি দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন ইস্যুতে বিভ্রান্ত। তবু ধন্যবাদ দিতে চাই দেশমাতাকে কোটি কোটি মানুষের একসাথে ভালবাসি বলার এমন একটি উপল্য তৈরী হবার সুযোগ তৈরী করার জন্য, বিশেষত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করবার জন্য। এমন সাহস আর কেউ করেননি। আমরা যতদুর বাংলাদেশের ভাল মন্দ দেখার এজেন্সি নেয়া লোকগুলোকে চিনি তাতে এমন সাহস কেউ করতেনও না। যদিও প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত এই ইস্যুতেও বিভ্রান্ত। বিভ্রান্ত বলছি এই কারণে, সম্ভবত তিনি এই ইস্যুকে পরবর্তী নির্বাচনে জয় লাভের প্রধানতম ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। এমনটি হলে এ অজস্র ভালবাসার স্বাদ দেশমাতৃকা পাবে না। কেননা, চল্লিশ বছরব্যাপী পাপ কাঁধে নিয়ে দেশ কান্ত, তাকে মুক্তি দেবার প্রয়াস হতে হবে কেবলমাত্র মহান উদ্দেশ্য নিয়ে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ব্যবহার করে জনগনের মধ্যে ঢেউ তৈরী করে সেটা থেকে পরবর্তী মতার সময় লাভের ভাবনা হবে নিছক প্রতারণা। বাংলাদেশের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, যার কন্যা শেখ হাসিনা কিংবা তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা এক সাহসী প্রধানমন্ত্রীর এমন বিরাট উদ্যেগের সাথে প্রতারণা শব্দ জড়িয়ে গেলে সেটা আরো বাজে শোনাবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক করে না তোলা, যিনি মতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের সকল সিদ্ধান্ত একা নিয়ে থাকেন বলে প্রতীয়মান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক বিশেষত ভোটের নকশা হিসেবে নিতে না চাইলে সম্ভবত এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, যখন দেশজুড়ে সর্বজন স্বীকৃত আন্দোলন চলছে, যে আন্দোলনের দাবী সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। যে ফাঁসির দাবী এসেছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়েতে ইসলামীর কেন্দ্রিয় নেতা কসাই নামে খ্যাত কাদের মোল্লার যুদ্ধাপরাধের রায় যাবজ্জীবন দেবার পর। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়ে শাসক দলের ‘হতাশা’ কোন কোন প থেকে লোক দেখানো মনে করা হলেও বস্তুত মুক্তমনা প্রতিটি মানুষই হতাশ, যার ফলাফল আজকের দেশব্যাপি আন্দোলন। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শ’ শ’ লোককে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত নিকৃষ্টতম অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউশন যাকে সরকার প নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা বিচারকের কাছে সেসব অভিযোগ যথার্থ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়নি। যার ফলে দেশবাসীর দাবী মতে কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়নি। অথচ দেশের মানুষ জানে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত প্রতিটি অভিযোগই সত্য, যার জন্য তার সাজা ফাঁসি হওয়া সঠিক শাস্তি হতে পারতো। এখন সরকারের প থেকে উচ্চতর আদালতে আপীলের কথা বলা হচ্ছে, যদিও দেশের যুদ্ধপরাধ আইনে স্পষ্ট, কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপীলে কোন ভাল ফলাফল বয়ে আনবে না। কেননা আরো বেশি শাস্তি দাবী করে রায়ের বিরুদ্ধে বাদী পরে আপীলের কোন সুযোগ নেই। কাদের মোল্লাকে যে একটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সরকারের প থেকে সে অভিযোগ নিয়ে উচ্চতর আদালতে যাবার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু দেশবাসীর সংশয়, দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোপূর্বে যে মামলার রায়ে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সে মামলা উচ্চতর আদালতে খুব ভাল ফল বয়ে আনতে কতটা সম হবে? তারচেয়ে যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধন করা বাঞ্চনীয়, যাতে রায়ে তুষ্ট না হলে বাদী প বেশি সাজা দাবী করে আপীল করতে পারে। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতার অধিকারী বর্তমান সরকারের সে মতা রয়েছে। দুর্বৃত্তদের হাতে পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারানোর ব্যথা প্রধানমন্ত্রী জানেন। তিনি জানবেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ল ল শহীদের পরিবারের সদস্যদের বেদনা। তিনি নিশ্চয় উপলব্দি করবেন, পাক বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া লাখো নারীদের ব্যথা। একজন বিদগ্ধ মানুষ হিসেবে তিনি শুনে থাকবেন, এই বষন্তের আবহাওয়ায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত মানুষদের আন্দোলনের শ্লোগান, যাদের শ্লোগানে কোন রাজনৈতিক মতলব নেই।
৮ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ স্কয়ারের মহাসমাবেশ পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে মুক্তিযুদ্ধের কিছু চিত্র পাওয়া যায়। এখানে চারটা প সক্রিয়। ১. প্রথম প যোদ্ধার ভূমিকায় রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। ২. দ্বিতীয় প অর্থাৎ মতাসীনরা গাড়ি থেকে নেমে স্লোগান দেবার জন্য মাইক চেয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যারা বিচারকে নকশায় অন্তরীন করার চেষ্টা করছে বলে শাহবাগের সমাবেশ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে। ৩. তৃতীয় প প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, যারা মহাসমাবেশ পর্যন্ত পুরোটাই এ গণজাগরণের বাইরে অবস্থান নিয়েছে, অবশ্য যাদের বিচার চেয়ে আজকের এ জাগরণ বিএনপি তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে বিভিন্নভাবে। সুতরাং তাদের থেকে শাহবাগ স্কয়ারের জনস্রোত কোন বাণী আশা করেনি। তাতে একটা বিষয় সময়ের কাছে অনেকটা স্পষ্ট যাতে বলা হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলন কিংবা অবস্থান কেবলমাত্র নিজেদের মতায় যাওয়া কেন্দ্রিক, জনপ্রত্যাশা কেন্দ্রিক নয়। এতে দলটি খুব বেশি লাভ করতে পারবে বলে মনে হয় না। দেশজুরে আজ যে জনস্রোত তৈরী হয়েছে এ স্রোত অব্যাহত থাকলে বিএনপির হিসাব নিকাশ উলটপালট হবে। যদিও গত কয়েক বছর সরকারের বিভিন্ন েেত্র ব্যর্থতা ও কেলেঙ্কারীতে বিএনপির ভালো সমর্থন তৈরী হয়েছিল। একজন বীর সৈনিকের তৈরী দল বিএনপির উচিত এখনই তাদের দোসর একাত্তরের ঘাতকদের জোট থেকে বিদায় করে দেয়া। তাছাড়া এ জাগরণ ঠেলে বিএনপি সামনের দিকে এগুতে পারবে বলে মনে করা কঠিন। ৪. শেষপ যুদ্ধাপরাধ সংগঠনকারী জামায়াত ও তাদের সহিংস সংগঠন শিবির। যারা তাদের নেতাদের বিচার ঠেকানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। হরতাল করছে। বোমাবাজি করছে। মানুষ হত্যা করছে। শাহবাদের আন্দোলন থেকে যাদের গণধোলাই দেবার ঘোষণা এসেছে। জামায়াত- শিবির এতে বিচলিত হবে বলে মনে হয় না। কেননা, অর্থনীতির পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে তাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল মনে করা হয়, যাদের রাজনীতির মূল উপাদান ধর্মানুভূতির অপপ্রয়োগ।
চল্লিশ বছর আগে যারা বাংলাদেশের জন্মতে বাধা দিয়েছে, চল্লিশ বছর পরও হরতালের মত কর্মসূচি দিয়ে সেই দেশকে অচল করবার মত মতা তাদের হাতে রাখা কতটা যৌক্তিক? এ প্রশ্ন আমার কাছে খুব মৌলিক মনে হয়। যারা এখন মতায় আছে, কিংবা প্রগতিশীল অন্যান্য দলকে আমার অবিজ্ঞান মনস্ক মনে হয়। প্রযুক্তির এই সময়ে মানুষকে যুক্তি দিয়ে বুঝালেই তারা বাস্তবতা বুঝবে। তাছাড়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে যে খুব সংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে তাও নয়। তাহলে কেবল মাত্র নিজেদের মতার জন্য কেন বড় দুটি দল এ আপদকে এতো সমীহ করে চলছে? কেন তাদের সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না? অপ্রয়োজনে অনেকবারই সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন মাত্র একবার প্রয়োজনে করা হবে না? প্রয়োজনে কেন গণভোট করা হবে না? দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, তাই পার্লামেন্টের এখনই সময় তাদের স্মার্টনেস দেখানোর।

অংশু মোস্তাফিজ
সাংবাদিক, বগুড়া।

কোন মন্তব্য নেই: