ডায়েরি


মমতা আমার মায়ের নাম

মা দিবসের লেখা published http://www.khabor.com/2012/05/02/25129552.htm
অংশু মোস্তাফিজ, বগুড়া (বুধবার ১২ মে ২০১২, ১৯ বৈশাখ ১৪১৯, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৩৩):- 
ভাতের চাল শেষ। দু’দিন আগে আলোর লাইন কেটে দিয়েছে, গতমাসের বিদ্যুৎ বিল দিতে পারিনি বলে। পকেটের টাকাগুলো মেপে দেখলাম, তোমার কাছে যাবার মত যথেষ্ট নাই আমার। কিন্তু মা, তোমার কাছে যাওয়া আমার বিশেষ জরুরী। আমার মাথার মধ্যে মাইগ্রেনের মত ব্যথা, তুমি বেশ কিছু দিন নারকোল তেল দিয়ে দাওনি বলে। আমার দুপুরের খাবার টেবিল কিংবা শেষ রাতের ঘুমে তোমার দেখা মুখ আমার ভাবনা নদীতে প্ল¬াবনের আয়োজন করছে আজকাল। আমি তোমার পায়ে হাত বুলাতে চাই একবার। আমি আরেকবার বাঁচতে চাই। আমি চাই শুদ্ধভাবে দুপুরের খাবার খেতে। আমি চাই আরেকবার চপচপে নারকোল তেল দাও আমার মাথায়। আমি চাই তুমি আমাকে তারাতারি ঘরে ফিরতে বলো এবং আমি চাই আরেকবার মশাড়িটা টাঙিয়ে দিয়ে ঘুমাতে যাও। মশাড়ি কিনতে পারিনি তাই তোমার কাছে যেতে চেয়েছিলাম।
আমার অশুদ্ধ জীবনের কথা কাউকে বলতে চাই, তাই তোমার কাছে যেতে চেয়েছিলাম। তোমার কাছে যেতে পারি না। মাথার উপড় রোদ। চারপাশে ধর্মান্ধ মানুষের দল। তোমার কাছে যেতে পারি না। তোমার সাথে দেখা হওয়া আমার বিশেষ প্রয়োজন। তোমার শুভাশীষ বিশেষ প্রয়োজন। তোমার নাম মমতা। কিন্তু গতবার বাড়ি গিয়ে তোমার দেখা পেলাম না। তার আগেরবার বাড়ি গিয়ে দেখা পাইনি। বাড়ি যাবার মত প্রয়োজনীয় ছুটি পাই না। তার আগে একবার বাড়ি গিয়ে দেখি তুমি লাশ হয়ে শুয়ে আছো। একজন সান্ত্বনা দিতে এসে বললো, ইস! তুমি কোন কথা বলোনি কিংবা অনেকদিন পর ঘরে ফেলা বলে একটু উচ্ছ্বাস, না। তুমি মরে পরে আছো। এবং আমাকে বুঝতে হয়েছে জীবন মানে এখন যন্ত্রণা। তোমার মৃত্যু সংবাদ আমাকে উন্মাদ করে তোলেনি, আমি সেভাবে বিশ্বাসও করতে চাইনি এবং তুমি যথেষ্ঠ ধৈর্য্য আমাকে শিখিয়েছো। কিন্তু যখন তোমার মুখ দেখলাম, অদ্ভুত শুয়ে আছো স্থির, কিভাবে আমার বুক ভেঙ্গে গেল, আমি আর কাউকে বুঝাতে পারবো না। তোমার জানাযা, তোমার অস্তিম শয়ানকাল আমাকে ক্রমশ’ পাগল করে তুলছিল। আমার এতো বড় ক্ষয় আমি আর কোনদিন দেখিনি। কি বিভৎস সময় আমার উপর দিয়ে বয়ে গেল, ভাবার মত সামর্থ আমার ছিল না। অথচ সব সত্যি হলো। আমি আর কোনদিন তোমাকে দেখলাম না। ঘরে- বাইরে, আলো-আঁধারে কি অবোধের মতোই না তোমাকে খুঁজেছি। স্মৃতি হাতড়ে কতটা অসহায়ের মতন জড়িয়ে ধরেছি তোমার চশমা, তোমার জুতো। তুমি সাড়া দাওনি। আমি বিশ্বাস করি, যদি সুযোগ থাকে পরকালে আবার দেখা হবে আমাদের। বিশ্বাস করি, যদি পুনঃজনমের সুযোগ থাকে আমি আবার তোমার সন্তান হবো। দাবী করি, তোমার কবরের উপরেই যেন হয় আমার অস্তিম শয়ান।
মাটির সোদা গন্ধ কখনো বোঝা হবে না আর। একডালা ঘাস কেটে বলা হবে না পানি দাও একগ্লস। তবু আমি সম্প্রতি যাবো। পা থেকে সান্ডেল খুলে না হয় ছুঁয়ে দেখবো তোমার কবর কিংবা আমার আট স্বর্গের কেন্দ্রবিন্দু। বিকেল হতে হতে একদিন চলে আসবো। পথের ক্লান্তি জুড়াতে তোমার পাশে বসবো কিছুক্ষণ। দেখা হবে না জেনেও তোমাকে খুঁজবো কিছুক্ষণ। আমাকে দেখতে পেলে হাত বুলিয়ে দিও মাথায়। একবার পবিত্র হতে চাই। হৃদয় ভরাতে চাই শুদ্ধ মমতায়। মমতা আমার মায়ের নাম ভেবে স্বস্থি পেতে চাই। একবার তোমার কাছে যেতে চাই। আমি আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাই। এবং আমার কথার উত্তর চাই তোমার থেকে। এই রোদকাল কাটলে যাবো তোমার দিকে। এই কৃষ্ণপক্ষ কাটলে তাকাবো তারাদের দিকে। তুমি কি সাড়া দেবে না।

কোন মন্তব্য নেই: